
ঢাকা: বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেল সংযোগসহ ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
প্রকল্পগুলো মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাত থেকে ৬৭৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা খাত থেকে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার যোগান দেয়া হবে।
রাজধানীর শেরে বাংলানগরে মঙ্গলবার একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সাথে আমাদের আন্ত:যোগাযোগ বহুলাংশে বেড়ে যাবে। ভারতের এই অংশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটবে। এতে উভয়দেশ লাভবান হবে।’ তিনি জানান, ভারত সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এই রেল লাইন নির্মাণ করা হবে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী প্রস্তাবিত রেল সংযোগ ভারতীয় অংশে বিদ্যমান আগরতলা স্টেশন হতে শুরু হয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পাঁচ দশমিক শূণ্য পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। বাংলাদেশ অংশে এটি আখাউড়া-চট্টগ্রাম রেল সেকশনে গঙ্গাসাগর স্টেশনে এসে মিলিত হবে। এরপর বিদ্যমান রেল লাইনের পূর্বপাশ দিয়ে সমান্তরালভাবে আখাউড়া জংশন স্টেশনে গিয়ে মিলিত হবে।
চুক্তি মতে, ‘মোট ১৫.০৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতের অংশে ৫.০৫০ এবং বাংলাদেশ অংশে ১০.০১৪ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মিত হবে।’ বাংলাদেশের অংশে ১০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অনুদান। বাকি ৫৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে মুস্তাফা কামাল জানান। তিনি বলেন, ‘চলতি বছর থেকে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়বে। আমরা সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এখন থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্প গ্রহণ করবো। যাতে এসব প্রান্তিক মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা যায়।’
মন্ত্রী জানান, আগামীতে এক বছরে একনেকে দেড় হাজারের অধিক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে। মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮ এর সী-ডাইক অংশে বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
আরো আছে চট্টগ্রাম জেলার বাপাউবোর আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলের পোল্ডার নং ৬১/১ (সীতাকুন্ড), ৬১/২ (মীরসরাই) ও ৭২ (সন্দীপ) এর বিভিন্ন অবকাঠামো সমূহের ভাঙ্গন প্রতিরোধ, নিষ্কাশন এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
রয়েছে নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণ (আট থেকে ১১তলা) (৩য় পর্ব) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন: শরীফ খিয়াম, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ