
ঢাকা: বাংলাদেশে অপুষ্টির জন্য প্রতিবছর প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়, যা স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয়ের চেয়েও বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ বা প্রায় চার কোটি মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে রয়েছে। তিনবেলা পেটভরে খাওয়া তাদের জন্য সমস্যার বিষয়।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধি ক্রিসটা রাদের, চিফ অব স্টাফ জেমস হার্ভে এ সময় বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবেদনে একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিকে প্রধান অন্তরায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে এও বলা হয় যে, ক্ষুধা, মঙ্গা, খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কমছে শিশুদের অপুষ্টিতে আক্রান্তের হার। এরপরও অপুষ্টির জন্য প্রতিবছর প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়, যা স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয়ের চেয়েও বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও এখনো প্রতি তিনজনে একটি শিশু নিপীড়নের শিকার। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও গত কয়েকবছরে দেশের অতি অপুষ্টিহীনতার হার সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়নি। দেশের গ্রামাঞ্চল ও বস্তিতে এ প্রবণতার হার বেশি।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপুষ্টির হার হ্রাসের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের বিশেষ পদক্ষেপ রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ সমসাময়িক দেশের অপুষ্টি দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এতে বলা হয়, সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, দায়িত্ব সচেতনতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। অপুষ্টির হার কমাতে গণসচেতনতাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। সমাজের প্রতিটি নাগরিককে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নারীদের বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও চাষাবাদের পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ সমসাময়িক দেশসমূহের বাস্তব অগ্রগতি তুলে ধরতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ‘স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তৈরি করে। এ সংক্রান্ত গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের আলস্টার ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স বিভাগের প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন আকতার আহমেদ, তাহমিদ আহমেদ, নায়োমি হোসেন, সালিমুল হক ও আসিফ শাহান।
এ দলটি ১০ মাস ধরে গুণগত ও পরিমাণগতসহ নানা মেথোডলজির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অপুষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে গবেষণার পর এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নানা উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হয়।
সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী বাজেটে বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য প্রতিবন্ধক। এছাড়া অপুষ্টিও আমাদের অন্যতম সমস্যা। এ সমস্যাগুলো মোকাবেলায় সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলআর আহবান জানান তিনি।
গ্রন্থনা: ময়ূখ ইসলাম, সম্পাদনা: জাহিদ