
ঢাকা: গোয়েন্দা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শরীফুল ইসলাম শরীফ ওরফে হাদি (৩৫) বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়সহ সাতটি হত্যাকান্ডের নেপথ্যে ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্মকমিশনার আব্দুল বাতেন এ তথ্য জানান।
এর আগে শনিবার রাত পৌনে ৩টায় খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া এলাকার বাশঁপট্টি নামক জায়গায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরীফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরীফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদি নিহত হয়।
আবদুল বাতেন বলেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত শরীফ অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। এছাড়াও সে ব্লগার নীলাদ্রী নীলয়, শান্তা মারিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু, জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নাজিমউদ্দিন সামাদ, ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী তনয় হত্যা এবং প্রকাশক আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি।
আব্দুল বাতেন বলেন, নিহত শরীফ নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক ও আইটি শাখার শীর্ষ পর্যায়ের একজন প্রশিক্ষক ছিল। শরীফ অভিজিৎ রায়ের খুনিদের একজন তা কিভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, টিএসসির সিসিটিভি ফুটেজে শরীফকে দেখা গেছে। তাছাড়া আগে থেকেই আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে শরীফ অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল। পরে তা যাচাই বাছাই করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে শরীফের ভূমিকা জানতে চাইলে আব্দুল বাতেন বলেন, ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু হত্যার ঘটনায় শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। আর জুলহাজ-তনয় হত্যায় তার টিম অংশ নিয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। অন্যান্য ঘটনাগুলোর তদন্তেও তার সরাসরি উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, প্রকাশক দীপন, ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু, নাজিমউদ্দিন, জুলহাজ-তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই শরীফ।
‘বন্দুকযুদ্ধের’ বিষয়ে আবদুল বাতেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল মেরাদিয়ায় শরীফ তার সহযোগীদের সঙ্গে থাকতে পারে। তাই শনিবার রাত থেকে ডেমরা-মেরাদিয়া সড়কে অবস্থান নেয় ডিবি পুলিশ। রাত ২টায় সড়কটি দিয়ে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে থামার নির্দেশ দেয়। তবে মোটরসাইকেলটি না থেমে পুলিশের উপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালালে ঘটনাস্থলে একজন মারা যায়।’
তিনি জানান, প্রাথমিক অবস্থায় জঙ্গি শরীফকে না চিনলেও মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার চেহারার সঙ্গে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গি শরীফের সঙ্গে মিলে যায়। রোববার সকালে পুলিশ শরীফের চেহারা চিহ্নিত করে। শরীফ ছাড়াও সে হাদি-১ নামে পরিচিত।
‘বন্দুকযুদ্ধের’ঘটনায় মূল আসামিরা এভাবে মারা গেলে তদন্তে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে কিনা? -সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, ‘পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে। তারা থাকলে তদন্তে সুবিধা হতো। তবে আমার মনে হয় না এতে কোনো সমস্যা হবে। কারণ অন্যান্য জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দীর ভিত্তিতে তদন্ত চলে।’ঘটনাস্থল থেকে ১টি মোটরসাইকেল, ১টি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে ৬ জন জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে ডিএমপি। একইসঙ্গে ওই ৬ জঙ্গি সম্পর্কে তথ্যদাতাকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়। ৬ জনের মধ্যে শরীফের নাম প্রথম ছিল।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এসআই