
শরীয়তপুর: সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. আকরাম এলাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বে অবহেলার কারণে মনির হোসেন নামের এক ইমারত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ৭টায় মনির হোসেন কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনের মতো চিতলীয়া ইউনিয়নের মজুমদার কান্দি গ্রামের বাড়ি থেকে ডোমসার বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ডোমসার দিঘির পাড় ব্রিজের কাছে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে স্থানীয় লোকজন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ সাহা তাকে ভর্তি করে নেন। এসময় রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. আকরাম এলাহীকে তিনি কল করেন।
রোগীর ভর্তি ফাইল এবং অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, ডা. আকরাম এলাহী সকাল সাড়ে ১০টায় মনিরকে দেখেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার ডান ঊরুর হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া মগজে জখমপ্রাপ্ত হয়। ডা. এলাহী এর চিকিৎসা হাসপাতালে না করে সকাল ১১টার দিকে তার নিজস্ব ক্লিনিক হাজী শরীয়তুল্লাতে পাঠিয়ে দেন। রোগীর অভিভাবকদের জানিয়ে দেন, বিশ হাজার টাকার দিলে মনিরের পায়ের অপারেশন হবে। একথা বলে তিনি তাদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেন।
সূত্র জানায়, এদিকে মনির মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও ডা. এলাহী সেদিকে খেয়াল না করে রোগীর পায়ের অপারেশন করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বিকেল ৩টার দিকে মনিরকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে মনির মারা যান।
মনির হোসেনের মা ছালেহা বেগম বলেন, “আকরাম ডাক্তার আমার ছেলেটাকে মেরে ফেললো। আমার ছেলের মাথায় আঘাত লেগে কান দিয়ে রক্ত চলে এসেছে, কিন্তু এদিকে সে খেয়াল করেনি। আকরাম ডাক্তার একটা লোভি, একটা কসাই। আমি এর বিচার চাই।”
মনির হোসেনের ছোট ভাই নূর হোসেন বলেন, “হাসপাতালে আমার ভাইকে ভর্তি করার পর ডাক্তার আকরাম এলাহী তাকে চিকিৎসা দেন। তিনি এসময় বলেন, ‘আপনার ভাইয়ের পায়ের অপারেশন এ হাসপাতালে হবে না। এ হাসপাতালে অপারেশন করার মতো কোনো যন্ত্রপাতি নেই। তাকে এখন আমার ক্লিনিকে নিয়ে যান। আমি কিছুক্ষণ পরে এসে আপারেশন করবো।’ তার কথামতো আমি মনিরকে হাজী শরীয়তুল্লাহ ক্লিনিকে নিয়ে যাই। অপারেশন করতে ২০ হাজার টাকা লাগবে। আমার কাছে তখন এত টাকা ছিল না। আমি তাকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দেই। মনিরের মাথায় আঘাত লাগে, এজন্য ডাক্তার কোনো চিকিৎসা দেয়নি। সে পায়ের অপারেশন করার জন্য অস্থির ছিল।”
এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আকরাম এলাহীর সাথে যোগাযোগ করতে গেলে হাসপাতালের চেম্বারে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইলে যোগাযোগ করতে গেলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, “মনির হোসেন নামের এক রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমাদের সাধ্যমত তাকে চিকিৎসাও দেয়া হয়। এরপর কি হয়েছে, আমি বলতে পারি না।”
সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমি জানি না। তবে ব্যাপারটি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
জেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি বি.এম মোজাম্মেল হক এম.পি বলেন, “প্রতি মাসের স্বাস্থ্য সভায় আমি ডাক্তারদেরকে চিকিৎসার মান উন্নয়নের কথা বলি। কোনো রোগী যেন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। ডাক্তারের অবহেলার কারণে রোগী মারা যাবে, তা মেনে নেয়া যায় না। আমি ব্যাপারটি কঠোরভাবে দেখব।”
প্রতিবেদন: ওয়াদুদ, সম্পাদনা: তাহের