
বিধুনন জাঁ সিপাই: কবিতা মানুষের জীবনের গভীরস্থল থেকে যেমন উৎসরিত হয় তেমনি কবিকে তাড়িত করে তার নাগরিক জীবন, তার অবদমিত বাসনা, তার অধরা বিলাসী কামনা। আধুনিক কিংবা উত্তরাধুনিক কবিতা’র আমলে যাপিত জীবন বড্ড গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কবিতার মঞ্চে। কবিতা একটা ঐতিহাসিক বিকাশের সিঁড়ি বেয়েই আমাদের দরবারে হাজিরা দিয়েছে। সেই দরবারে কবিতা’র পাঠ কিভাবে নেয়া হবে তা কেবল পাঠকর্তা স্বয়ং ঠিক করুন। আমরা সেখানে কোন পদ্ধতিগত প্রকল্প দিতে রাজি নই।
রাফা ইসলাম আলমগীর। যার সাথে পরিচয় সামাজিক মাধ্যমে। পোষ্ট কলোনিয়াল জমানায় আমরা অসামাজিক এই কথা বলা যাচ্ছে না। যারা বলছেন, আসলে তারাই পূর্বের সমাজ কাঠামোর মধ্যে ধান্দা ফিকির করেছেন এবং অশান্তি বাঁধিয়েছেন। সে অন্যত্র আলোচ্য বিষয়। কুতর্কের দোকান খুলিনি আমরা এখানে।
মধ্যশ্রেনীর সমাজব্যবস্থায় একজন মানুষ অবদমনের শিক্ষা নিয়েই বেড়ে ওঠে। নাগরিক জীবনে বিলাসিতার আশা আর না পাওয়ার হতাশা মধ্যশ্রেনীর মানসকে আসলে অনুর্বর করে দিয়েছে। জীবনকে কেবল বহন করেই যায় এরা, সেই জীবনে ‘আলাদা করে আকাশ দেখতে’ কতজনেরই বা খায়েশ হয়। তবুও রাফা ইসলাম আলমগির আমাদের আকাশের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চান। আকাশের বিশাল বুকে ‘মুঠোয় পুরে রাখব তোমার হাত’।
‘আকাঙ্খা নিয়ে বেঁচে থাকে বুক’, বুক থাকলে ফুসফুস থাকে, তাতে বাতাস আসে যায় আর আমরা বেঁচে থাকি। বেঁচে থাকলেই কবির পদাবলী কাঁথার বুননের মত আঁকে জীবনের পদ্য। ‘দরজায় বৃষ্টি হাতে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ তাকে বলো চলে যেতে এখানে বসন্ত নেই’। বসন্ত না থাকার ছুতোয় রবীন্দ্রনাথকে তাড়িয়ে দিয়ে রাফা ইসলাম নিজেও বৃষ্টিতে ভিজতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ‘বিভোর আতঙ্ক দেখি পৃথিবীর অস্থির মজ্জায়’, রবীন্দ্রনাথের বৃষ্টি আস্তে আস্তে রাফা’র এই বিভোর আতঙ্ক নিভিয়ে দিলেও ‘আজ রাইতে ভেঙে গেলে ঘুম বেরিয়ে যাবো রাস্তায়, জ্বালিয়ে নিয়ে নিবিড় আঙ্গুল…’
.
চুমু
.
ইট, পাথরের এই শহর থেকে ছুটি
নিয়ে
চলো একদিন আলাদা করে “আকাশ”
দেখতে যাই। আলগোছে আমি
মুঠোয়
পুরে রাখব তোমার হাত। বাচ্চারা
ঘুড়ি উড়াবে! উড়াক। আচমকা
তোমাকে একটি চুমু খেয়ে ফেলব!
চুমুই
তো!
হোক নাহয় একটু ভালোবাসাবাসি।
.
.
বৃষ্টি
.
এই ঝুম বৃষ্টি’র রাইতে বুকের মধ্যে
তোমার প্রিয় চোখ মনে পরে
প্যাগোডার নির্জন দেয়াল যেমন ধরে রাখে চিরস্থায়ী সন্ধ্যাবেলা
বাতাসে পাল্টে যাওয়া চোখ ;
আকাঙ্খা নিয়ে বেঁচে থাকে বুক।
কেঁদে উঠে কাব্যের শুন্য হাত
আর কলমে কলমে পৃথিবীর তাবৎ কবিরা লিখে
যায়, তাঁদের মৃত্যুর পদাবলি
পার্কের নিঃসঙ্গ বেঞ্চিতে বসে
থাকে সকাল আর বিকেল
শোকাচ্ছন্ন আমাদের সনাতন মন।
আজকে দিন নয় কাব্যের-
দরজায় বৃষ্টি হাতে দাঁড়িয়ে আছে
রবীন্দ্রনাথ
তাকে বলো চলে যেতে
এখানে বসন্ত নেই ; প্রতি
সন্ধ্যাবেলা নিমগ্ন রাত টেনে
নিয়ে যায় আমাদের
তুমি চলে গেছো ফেলে গেছো
করুণ বিষাদ
বিভোর আতঙ্ক দেখি পৃথিবীর
অস্থির মজ্জায়
আজ রাইতে ভেঙে গেলে ঘুম
বেরিয়ে যাবো রাস্তায় , জ্বালিয়ে নিয়ে
নিবিড় আঙ্গুল।
সম্পাদনা- এস. কে. সিদ্দিকী