
ডেস্ক: প্রথম আলো তার সম্পাদকীয়তে সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিরোনামে লিখেছে, “মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে দেশটির সামরিক বাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আটকে পড়ার বিষয়টি নতুন করে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে আরও একটি মানবিক বিপর্যয় বিশ্বের জনগণকে অসহায় দর্শক হিসেবে প্রত্যক্ষ করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুরক্ষার গুরুত্ব অসামান্য। আমরা সব সময় আশা করি, সেখানকার গণতন্ত্রের কন্যা অং সান সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়ণ একটি অনুসরণীয় সাফল্যের নজির সৃষ্টি করবে।
দেশটির অন্যতম জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি দুঃখজনক। তদুপরি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের খবরে আমরা আশাবাদী। আর সাত সদস্যের এই কমিশনের কার্যক্রম চলমান থাকার মধ্যেই রাখাইন প্রদেশে গত মাসে সীমান্তের পুলিশ ফাঁড়িতে কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের ভয়ংকর হামলার অভিযোগে তাদের ওপর নির্বিচার হামলা জোরদার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ঘটনার পর থেকে কথিত হামলাকারীদের খুঁজে বের করার অভিযানে ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাড়িছাড়া হয়েছে এবং অন্তত ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে।”
টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা শিরোনামে কালের কণ্ঠ লিখেছে, “পৃথিবীব্যাপী সুপেয় পানির উৎস ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। কমছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানির পরিমাণও। হুমকির মুখে পড়ছে প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। সার্বিকভাবে মানবজাতি এক গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিত জলবায়ুসংক্রান্ত বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রেখেছেন। তিনি পানি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহায়তা করতে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য এ তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
অনেক বিজ্ঞানী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি কখনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়, তা হতে পারে পানি নিয়ে বিরোধের কারণে। সুপেয় পানি বা কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানির অভাবে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু উদ্বাস্তুর পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশেরও বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অনেক এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যাচ্ছে। গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। নদী থেকে সেচের মাধ্যমে কৃষিকাজও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দূষণের কারণেও অনেক নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। অনেক নদী মরে গেছে বা হারিয়ে গেছে। এ সব কিছুরই ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ক্রমাগতভাবে কৃষির ওপর। আবার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং নোনা পানি অনুপ্রবেশের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিও ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি ব্যাহত হলে খাদ্যোৎপাদন ব্যাহত হবে এবং জনজীবনে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে—এটাই স্বাভাবিক। তাই সমস্যা প্রবল আকারে মাথার ওপর এসে পড়ার আগেই সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে নোনা পানি সহিষ্ণু চাষাবাদ উন্নয়নে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা বা অভিযোজন বিষয়ে সীমিত পরিসরে গবেষণা চলছে। নোনা পানির অনুপ্রবেশ বন্ধে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়ার মতো সক্ষমতাও বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেরই নেই। তাদের জন্য বৈশ্বিক গবেষণা ও বৈশ্বিক উদ্যোগ খুবই জরুরি এবং তা করতে হবে সময় থাকতেই।”
সমকাল তার সম্পাদকীয়তে উন্নত বিশ্বকে প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে শিরোনামে লিখেছে, “মরোক্কোর মারাকাশে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার যে আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তাতে গোটা বিশ্বের বিপন্ন মানুষের কণ্ঠস্বর অনুরণিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেই কোপেনহেগেন থেকে প্যারিস সম্মেলন পর্যন্ত প্রত্যেকটি আয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে বিপন্ন বিশ্ব কীভাবে সম্মেলনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থেকেছে! মারাকাশ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এখন তারা দেখতে চাইবে উন্নত বিশ্ব তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কতটা আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সত্যই উচ্চারণ করেছেন। এই দৈত্যাকায় দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সুসংহত করার যে তাগিদ তিনি এ-সংক্রান্ত দ্বাবিংশতম শীর্ষ সম্মেলনে দিয়েছেন, তাও সময়োচিত। আমাদের মনে আছে, প্যারিসে অনুষ্ঠিত গত সম্মেলনে কীভাবে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব একটি ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তিতে উপনীত হতে পেরেছিল। ভুলে যাওয়া চলবে না, এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যথার্থ ও যথাসাময়িক না হলে, নিছক চুক্তি কেবল কাগুজে সান্ত্বনাই হয়ে থাকবে। এও মনে রাখা জরুরি যে, এ ধরনের চুক্তি বাস্তবায়নে উন্নত বিশ্বকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে ”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী শিরোনামে ইত্তেফাক লিখেছে, “মহাকালের ক্যানভাসে বিন্দুবত্ মনে হইলেও একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্ধশত বত্সর একেবারে কম সময়ও নহে। তাহা আরও তাত্পর্যপূর্ণ হইয়া ওঠে যখন সেই সময় পত্রপুষ্পে পল্লবিত হইয়া নিজেকে দৃশ্যমান করিয়া তোলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নিঃসংশয়ে এই কথাটি প্রযোজ্য হইতে পারে। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহর হইতে ২২ কিলোমিটার দূরে নির্জন পাহাড়বেষ্টিত ক্যাম্পাসে মাত্র ২০০ জন ছাত্র, ৭ জন শিক্ষক ও ৪টি বিভাগ লইয়া যে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হইয়াছিল তাহা এখন ২২ হাজার শিক্ষার্থী লইয়া দেশের তৃতীয় বৃহত্ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ক্যাম্পাসের আয়তনের দিক হইতে ইহাই সর্ববৃহত্। এহ বাহ্য। সাতটি অনুষদ, ৫২টি বিভাগ, পাঁচটি ইনস্টিটিউট ও পাঁচটি গবেষণা কেন্দ্র লইয়া চলিতেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতকের পদযাত্রা যে বিফলে যায় নাই—তাহা শনাক্ত করিবার জন্য এই তথ্যটুকুই যথেষ্ট বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে। তবে ইহা যে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশাল অর্জনের অতি ক্ষুদ্র অংশ, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। এই সাফল্য বা অর্জন যে উদযাপন করিবার মতো—তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই।”
গ্রন্থনা: প্রণব