
আল মাসুদ নয়ন, বিশেষ প্রতিনিধি,
ঢাকাঃ ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় অতিবৃষ্টির কারণে দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে প্লাবিত ছিল দেশের প্রায় অর্ধেক জেলা। আগস্টের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চলে। ফলে একদিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আরেকদিকে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের বিপদ।
বিশেষ করে অমাবস্যা, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু এবং সাগরে লঘুচাপ- একই সময়ে তিন বিপদ দুর্বিপাকে ফেলেছে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলকে।
বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, জুলাই মাসে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এর প্রভাবে উত্তরের সঙ্গে বন্যায় নাকাল হতে হয়েছে মধ্যাঞ্চলকেও। আগস্টে এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বেড়েছে। ফলে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় জনপদে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আগস্টে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাধারণত শুধু অতিবৃষ্টির কারণে এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় না। সব সময় কিংবা সব বছরে এমন অবস্থা দেখা যায় না। এবার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে। ১৯ আগস্ট শুরু হয় অমাবস্যা। একই সময়ে সাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় ছিল এবং মধ্যপ্রদেশে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাব যুক্ত হওয়ায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়।
তিনি আরও জানান, চলতি মাসজুড়ে উপকূলসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারি বর্ষণের আভাস দিয়ে তিনি বলেন, সোম ও পরের দিন মঙ্গলবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা কমে আসতে পারে। বাকি দিনগুলোতে অতিবৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, চলতি মাসের শেষদিকে ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে না। কারণ, এই সময়ে এসে পানি নদনদীগুলোতে ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তিনি জানান, এছাড়া, বর্তমানে বেশিরভাগ নদনদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় এখনও বন্যার পানি রয়েছে। আত্রাই, ধলেশ্বরী ও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে চলমান বর্ষণে তিনটি নদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকা এবং ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় শনিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। শনিবার সর্বোচ্চ ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় চট্টগ্রামে। এ ছাড়া সন্দ্বীপে ৮৬, কক্সবাজারে ৭৫, কুতুবদিয়ায় ৭৭, সীতাকুণ্ডে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায়ও ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোতেও কমবেশি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশে অবস্থান করছে। সেখানে রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। নতুন করে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ফলে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আগামী বুধবার পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিভিন্ন ফসলের আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে দেশজুড়ে। দীর্ঘকালীন বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগই মিলছে না। বরং নতুন নতুন বিপদের মুখোমুখি কৃষকরা।