
আসিফ আলম, ঢাকা:
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার দেখতে দেখতে কেটে গেল ৪৫ বছর। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে তরুণ প্রজন্মের চোখে কেমন এই স্বাধীনতা। স্বাধিকার আন্দোলনের সেই গল্পে আজও কতটুকু আঁচর কাটে তাদের হৃদয়ে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এমন সব কথা নিয়েই নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।
কেমন আছেন?
এইতো আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসায় ভালোই আছি।
বিজয় দিবস, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি পায়। একজন অভিনেতা হিসাবে নাটক, মঞ্চ নাটক এবং চলচ্চিত্রে কতটুকু সেই মুক্তিযুদ্ধ ফটে উঠেছে বলে মনে করেন?
সত্যি কথা বলতে যতটুকু ফুটে উঠার কথা ছিল ততোটুকু ফুটে উঠেনি। তবে কিছুটা ফুটে উঠেছিল তাও মুক্তিযুদ্ধের পর যে সব চলচ্চিত্র বা নাটক নির্মাণ হয়েছিল তাতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা আর ফুটে উঠছেনা।
এমনটা কেন হচ্ছে?
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এই বিষয় গুলোর পরিধি বিশাল। এত সহজেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ আধুনিকতার ছোঁয়ায় বেশ পরিবর্তিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে ফুটিয়ে তুলতে হলে পারিপার্শ্বিক যেই লুকের প্রয়োজন, পাশাপাশি লোকবল, পোশাক পরিচ্ছদ এবং টেকনিক্যাল ব্যাপার থাকা প্রয়োজন তা এখন পাওয়া যায় না। আর এই কারণেই বর্তমানে তেমন ভাবে নাটক, মঞ্চ নাটক এবং চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ ফুটে উঠছে না।
তরুণ প্রজন্মের চোখে স্বাধিকার আন্দোলন?
সত্যি কষ্ট হচ্ছে বলতে, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম যতই সময় যাচ্ছে ততোই মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস যেনে বড় হচ্ছে। আমিও মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু আমার বাবা-মার কাছে এই ইতিহাস জেনেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ের নতুন প্রজন্মরা মুক্তিযুদ্ধের মতো এক গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাসের বিকৃত রূপ জেনে বড় হচ্ছে।
গণমাধ্যম মানুষের চেতনা, ইতিহাস লালন করে, সেক্ষেত্রে আমাদের গণমধ্যমগুলো কতটুকু তা পালন করতে পারছে?
গণমাধ্যম দেশের ইতিহাস মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বড় একটা মাধ্যম। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের গণমাধ্যমগুলো সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
কেন এই ব্যর্থতা?
সঠিক ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক বেশি প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের গণমাধ্যম গুলোর সেই স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। কারণ বেশি ভাগ টিভি চ্যালেন, পত্রিকাগুলোর মালিক নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা দেখাতে টিভি চ্যালেন, পত্রিকা খুলে বসে। পাশাপাশি আমাদের গণমাধ্যমগুলোই রাজনৈতিক প্রভাব যুক্ত। যার ফলে দেশের মানুষ, বর্তমান প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সবার কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হলে সবার আগে গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করতে হবে।
স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে, আপনার চোখে দেশ প্রেম কী?
আমরা নামে স্বাধীন, কাজে নয়। স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু তা ধরে রাখতে পারিনি। আর দেশ প্রেমের কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলবো আমাদের মাঝে দেশ প্রেমের বড্ড অভাব। আর এই অভাবের কারণেই দিন দিন দুর্নীতি বেড়েই চলচ্ছে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না। চলছে ধর্মের নামে রাজনীতি। দেশ প্রেম থাকলে হয়তো এসব হতো না। আমারা সবাই বলি আমারা আমাদের দেশকে ভালোবাসি কিন্তু কাজের বেলায় তার কোন ছোঁয়া নেই।
নিজ মাতৃভূমিকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছি। সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশের মতো শান্তি আর কোথায় পাইনি। আমি শুধু এতটুকুই বলবো যে; আমি চাই আমাদের দেশের দুর্নীতি, ধর্মের নামে যে রাজনীতি চলে এই সব বন্ধ হোক। আর দেশের প্রতিটি মানুষ যেন শান্তিতে, সুখে বেঁচে থাকতে পারে এই আশাই করি।
আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ আর সাবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ