
লিটন চন্দ্র ভৌমিক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্যাতিত হিন্দুরা বলেছে ‘হাজার হাজার মানুষ যখন হামলা করেছিল, তখন কিছু মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো’। আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তা নির্ভর করছে এই রুখে দাঁড়ানো মানুষগুলোর উপর। এই রুখে দাঁড়ানো, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো মানুষ বাড়লেই রক্ষা পাবে বাংলাদেশ।
হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-খ্রিস্টান-শিয়া-আহমদিয়াদের তাড়িয়ে পাক-আফগান আজ পৃথিবীর আস্তাকুড়ের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।বিপরীতে মুসলিম প্রধান মালয়েশিয়া কিন্তু সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ। কারণ মালয়েশিয়া সকল ধর্ম, জাতীয়তা, সংস্কৃতিকে জায়গা করে দিয়েছে। পাকিস্তানের এক অধ্যাপক একবার বলেছিলেন, আমাদের পাকিস্থানে সব ছিলো, ‘সংস্কৃতি-সাহিত্য-প্রগতিশীলতা, সমস্ত জাতিগোষ্ঠীকে তাড়ানোর সাথে সাথে সবই হারিয়ে যাচ্ছে’।
একক ধর্মের রাষ্ট্র হলে বাংলাদেশ কেমন হবে, অনুমান করা যায়!
আমেরিকার ১৬০টি বড়শহরের উপর গবেষণা করে Ottaviano ও Giovanni Peri দেখিয়েছেন, আজ আমেরিকার বিশাল অর্থনীতি, শিক্ষাখাত, স্টার্ট-আপ কোম্পানি, উৎপাদনশীলতার মূল বহুজাতির বহুসংস্কৃতির শক্তি। যে শহরে যতবেশি ইমিগ্রান্ট, সে শহরের আমেরিকানরাও তত পরিশ্রমী (Power of cultural diversity)। প্রকান্ড নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, শিকাগো বহুজাতি-বহুসংস্কৃতির শক্তির উপর ভর করে প্রসারিত হয়েছে।
Wesley Sze তার ‘Is Cultural Diversity Good for the Economy?’ নামক বিশাল গবেষণায় দেখিয়েছেন- অজস্র জাতিগোষ্ঠী শুধু কানাডাকে উন্নত করেনি; কানাডিয়ানদেরও উৎপাদনশীল, পরিশ্রমী বানিয়েছে; কানাডার শিক্ষাখাতকেও বিশ্বমানের বানিয়েছে।
Elena Bellini ইউরোপের ১২টি দেশের অর্থনীতির উপর গবেষণা করে দেখিয়েছেন বহু সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, জাতীয় বৈচিত্র্য ইউরোপীয় অর্থনীতির প্রধান উপকরণ।
তারা দেখিয়েছেন- একেকটি ধর্ম, একেকটি জাতীয়তা, একেকটি ভাষা, একেকটি সংস্কৃতি একেক ধরণের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, অভিজ্ঞতা, নতুনত্ব নিয়ে আসে। যেখানে আজ দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া।
আমেরিকা-কানাডা- ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া তো আজ বহুজাতির বহু সংস্কৃতির দেশ হয়েছে ইমিগ্রান্ট এনে। আমরা আমাদের মাটিতেই অজস্র জাতি-গোষ্ঠী-ভাষা-সংস্কৃতি নিয়েই ছিলাম। কেন আমরা তা নষ্ট করে দিচ্ছি? ৩৫ টি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব মিলিয়েইতো আমরা সমৃদ্ধ ছিলাম।
কেন হিন্দুর সংখ্যা ৪৫ বছরে ২৮ ভাগ থেকে ৭ ভাগে? কেন বৌদ্ধ খ্রিস্টানরাও কমছে? কেন ৩৫ টি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা ভাষা-সংস্কৃতি-ভূমি হারিয়ে নিজভূমে পরবাসী হচ্ছে?
আর কিছু নয়, চাওয়া শুধু- আমার বাংলাদেশও সকল জাতি, সংস্কৃতি, চিন্তা, ধর্মের জন্য আশ্রয়-ভরসা হয়ে উঠুক।
লেখক: পিএইচডি শিক্ষার্থী, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।