
গাইবান্ধা: জেলার গোবিন্দগঞ্জে পুলিশ-সাঁওতাল সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো আতঙ্ক কাটেনি সাঁওতালদের। এরইমধ্যে রোমেশ সরেন (৪০) নামে আরো এক সাঁওতাল যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজ বাড়িতে রোমেশ সরেনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবার ও আন্দোলনকারীরা।
এদিকে সাহেবগঞ্জ (বাগদা-কাটা) এলাকায় উচ্ছেদ ও লুটপাটের ঘটনার এরই মধ্যে পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও সাঁওতাল পল্লীর মানুষরা বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে, দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার পর ধ্বংসস্তূপে আখ রোপণ ও চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। ফলে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সাপমারা ইউনিয়নের সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গ্রামে অবস্থান করছে।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় চিনিকলের জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। এগুলোতে আখ চাষের পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রতকুমার সরকার জানান, ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে। কিন্তু ঘটনায় জড়িত নয় এমন কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না।
তিনি আরো জানান, এছাড়া আধিবাসী সম্প্রদায়ের দুজন নিহতের ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাঁওতাল অধ্যূষিত মাদারপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত তরণ মুরমু, মিকাই মুরমু, রুমিলা কিসকু বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। কৃষি কাজ করে সংসার চলে। সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের ইন্ধনে তারা বাপ-দাদার জমি ফেরত পাবার আশায় ধার-দেনা করে মিলের জমিতে চালা ঘর উঠায়। আবার তার নেতৃত্বেই রোববার চালানো হয় উচ্ছেদ অভিযান। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরগুলো আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়া হয়। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লুট করে নিয়ে যায়। এখন সবসময় রাস্তার দিকে চেয়ে থাকি, কখন না জানি আবার হামলা হয়।
ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির আহ্বায়ক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “আদিবাসী বাঙালির সম্মিলিত ভূমির অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সম্পৃক্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর ৬ নভেম্বর পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তান বাহিনী হামলা চালায়। বিনা উস্কানিতে সাধারণ নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ করে তারা পাঁচ আদিবাসীকে গুরুতর আহত করে। তাদের মধ্যে শ্যামল হেম্ব্রম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “এলোপাথারি গুলি চালানোর ফলে পল্লীর বাসিন্দারা সবকিছু ফেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। সেই পল্লীতে প্রায় দুই হাজার পাঁচশো মানুষের বাস ছিল। বর্তমানে প্রায় দুশো আদিবাসী সুগার মিলের পাশে জয়পর ও মাদারপুর নামের দুটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরা এখনো পুলিশ ও মাস্তানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।”
আরও পড়ুন
সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ আতঙ্কে পুরুষরা ঘরছাড়া
‘আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতেই পরিকল্পিত হামলা’
প্রতিনিধি, সম্পাদনা: ময়ূখ