
ঢাকা: উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরে ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ মাহমুদুল হাসানও মারা গেছেন। শনিবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আগুনে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
এ নিয়ে লিফট ছিড়ে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ছয় জনের নাম জানা গেছে, তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রয়েছে। এরা হলেন- রেজাউল করিম রানা (৩২), সালমা আক্তার (৪০), কামরুন্নাহার লতা (৩০), মিজানুর রহমান (৫৩), জসিম উদ্দিন রফিক (৩৫) ও মাহমুদুল হাসান (৩৬)। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত মাহমুদুল হাসান ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের উপ মহাব্যবস্থাপক। অগ্নিদুর্ঘটনায় তার দুই সন্তানও দগ্ধ হয়েছেন। মাহমুদুলের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায়। আগুনে তার মেয়ে মেহনাজ হাসান মাইশার (১০) শরীরের ৫০ শতাংশ এবং ছেলে মোমতাকিন হাসানের (৮ মাস) ২৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানান, তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
জানা গেছে,মাহমুদুল হাসান আলাউদ্দিন মার্কেটের বেজমেন্টে অবস্থিত ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের ডিজিএম। তার অফিসের কলিগদের পরিবার নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। মাহমুদুল ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে আগেই অফিসে চলে আসেন। স্ত্রী মেহবুবা হাসান উত্তরা ১৩নং সেক্টরের ৩নং রোডের বাসা থেকে আসছিলেন। এর মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। মাইশা মাইলস্টোন স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী।
এর আগে শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার বিধান ত্রিপুরা নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত সাড়ে ন’টার দিকে বেইজমেন্ট থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ওই ঘটনায় ৭০ থেকে ৮০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মদ খান। তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের সাথে একটি যৌথ তদন্ত কমিটিও করা হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রের সাথে তার আলাপ হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্পোরেশন (রাজউক)’র টিম এসেছে।
‘ভবনটির পিলারের কোনো ক্ষতি হয়নি’ – উল্লেখ করে আলী বলেন, ‘বেজমেন্টে মসজিদ, অফিসসহ নানা স্থাপনা ছিলো। ওখানে এগুলো করা ঠিক হয়নি। বেজমেন্ট খালি রাখা উচিত ছিলো।’ ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটগুলোর মতো উত্তরার আলাউদ্দিন টাওয়ার শপিং মলেও শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু ঈদকে বরণ করার জন্য কেনাকাটার উপলক্ষ মুহূর্তেই পরিণত হয় আতঙ্কে। ১৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে একটি লিফট ছিঁড়ে পড়ে যায় বেজমেন্টের নামাজের স্থানে। দেয়াল ভেঙ্গে যায়। আগুনে ছেয়ে যায় পুরো মার্কেট। ভবনটির উপরের বাকি ১০ তলায় রয়েছে বিভিন্ন অফিস ও বাসা।
আগুনের ঘটনায় সবগুলো তলা থেকে আতঙ্কিত মানুষ একসাথে নামতে শুরু করলে আহত হন অনেকে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট প্রায় সোয়া ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ সদস্যরাও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। হতাহতের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। আহত মানুষদের ঢাকা মেডিকেলসহ উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শঙ্কটাপন্নদের স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতালগুলোর পরিবেশ।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এসপিকে/ওয়াইএ