
ময়ূখ ইসলাম, ঢাকা: গুলশানে জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে চলেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা থাকলেও হচ্ছে না ক্লাস। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।
স্কলাসটিকার পাঁচটি ক্যাম্পাসই বন্ধ। তবে অফিস খোলা। ধানমন্ডি-১৫’র ক্যাম্পাসের সিকিউরিটি ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছু নিরাপত্তাজনিত কাজ চলছে তাদের। তবে এ মাসের শেষ নাগাদ স্কুল খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এরই মধ্যে পুরো ক্যাম্পাসের দেয়ালের ওপর লাগানো হয়েছে তারকাটার আবরণ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তা জোরদারের কাজ চলছে বলে স্কলাসটিকার ক্যাম্পাস বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা মাস্টারমাইন্ড, সানবিম, কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মতো নামিদামি স্কুলগুলোরও।
মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, এখনো স্কুলের শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে ঠিক কি কারণে ক্লাস বন্ধ রয়েছে তা জানা যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে স্টাফ পরিচয়ে টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘অফিসে কেউ নেই, কী কারণে ক্লাস বন্ধ রয়েছে তা আমরা বলতে পারবো না।’ কবে নাগাদ খোলা হতে পারে তাও জানাতে পারেননি তিনি।
কর্তৃপক্ষ স্কুল খোলার কোন তারিখ জানাচ্ছে না, ফলে সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। আবার হঠাৎ ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বন্ধে উদ্বেগ আরো বেড়েছে। যারা স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলো তারাও এখন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ঘোষণায় নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।
যদিও শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোনো স্কুলে নিরাপত্তা শঙ্কা থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করতে পারে না।’
সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্রিটিশ কাউন্সিল জানায়, বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিস এখনো সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার্থীদের (ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল এক্সামিনেশনস এবং পিয়ারসন এডেক্সেল) পরীক্ষা যথাসময়ে এবং নির্ধারিত জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে।
কাউন্সিল জানায়, ব্রিটিশ কাউন্সিল বন্ধ থাকলেও দাফতরিক কাজ দূরে বসে সম্পন্ন করা হচ্ছে। দেশব্যাপি ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম ও সেবা অব্যাহত থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিস আবার চালু করার বিষয়ে কাউন্সিল আশাবাদী।
অন্যদিকে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে- গুলশানে জঙ্গি হামলায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ছিল নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। রোহান ইমতিয়াজ ও মীর সামিহ মোবাশ্বের পড়ত স্কলাসটিকা স্কুলে। নিবরাস ইসলাম পড়েছে ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। গুলশান হামলায় নির্বিচারে বিদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় এখন বিদেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে একাডিমিয়া, অক্সফোর্ড, ম্যাপললিফ, সানিডেল স্কুলের ক্লাস চলছে বলে জানিয়েছে ওই স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘কোনো স্কুলে নিরাপত্তা শঙ্কা থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করতে পারে না।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এমআই/এমএস/এসজি