
সৈয়দ ইফতেখার আলম, মুন্সীগঞ্জ: প্রায় ১২ কিলোমিটার আগে থেকে চলছে কাজ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মাসেতুর প্রবেশ পথের দিকটায় এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। যেমন মাওয়ায় এগোচ্ছে সংযোগ সড়কের প্রায় ১১ কিলোমিটারের কাজ, একাধারে দক্ষিণে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলাতেও চলছে তা। গড়ে উঠছে স্বপ্নময় সেতুর সংযোগ যোগাযোগ। কাজের ধরন ও মান নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকার আদলে বিশ্বমানের কাজই চলছে এখানে।
দিন-রাত কাজে শেষ হয়েছে সেতু থেকে ঢালু পথে নেমে গোলচত্বর। এরপর আন্ডারপাস দিয়ে বয়ে যাওয়া সীমাহীন পথে। হাইওয়ে গতি বজায় রেখে আর একটু টান দিলেই একে একে ছোট-মাঝারি ব্রিজ, কালভার্ট। এ যেন এক অতি অধুনিকতার ছোঁয়া। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্বের হাতছানি প্রস্তুত। এবার শুধু মাঝে সেতু জোড়া লাগলেই সব কাজ সারা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০১২ সাল থেকে কাজ শুরু করে এই প্রকল্পটি পরিপূর্ণ করেছে। তাদের সঙ্গে ছিল মালেশিয়ান কোম্পানি এইচসিএম কনস্ট্রাকশনস।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। সড়ক ছয় লেনের। এর মধ্যে ২০টি কালভার্ট, ৫টি সেতু ও ৮টি আন্ডারপাস রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী ক্যাম্পে দুই ব্যাটালিয়ন কাজ করছে এখানে।
সেতু গড়ে উঠলে এ এলাকার উন্নতির বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফিরোজ বেপারী বলেন, মাওয়া হলো নদীর একপার। আর আমরা নদীর ওপারের মানুষ। আগে থেকেই কিছুটা অবহেলিত বা বঞ্চিত আমরা। তবে এখানে জাজিরা উপজেলায় নাওডোবাতে পদ্মাসেতু এসে নামবে। তার সামনে-পেছনে সব পাশ থেকে প্রায় সাড়ে ৩শ’ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে গড়ে উঠছে সংযোগ সড়কের পাশাপাশি বিশাল রিসোর্ট, পর্যটন এলাকা, টোল বক্স, নাওডোবা পশ্চিম পাশে হাইওয়ে থানা-পুলিশ ফাঁড়ি, সুবিশাল হাইওয়ে, দৃষ্টি নন্দন রাস্তাঘাট, চৌমুখী সড়ক আরও কত কী। এসব পাল্টে দেবে এখানকার মানুষের ভবিষ্যৎ। নানামুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
নাওডোবা ইউনিয়নের ফকিরকান্দি বা ছাদ্দেরফকির গ্রামের ইলেক্ট্রনিক্স মিস্ত্রি মো. ইয়াসীন (২২)। পদ্মায় সেতু ও এর আশপাশে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে এখনকার জমির দাম বেড়েছে বলে জানালেন। নাওডোবায় যেখানে পদ্মাসেতুর শেষ মাথা তার থেকে খানিক ভেরতে ফকিরকান্দি গ্রামটি। গ্রামের একটি মাচায় বসে কথা হলো ইয়াসীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এখানকার জমি ছিল বিঘাপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা। পদ্মা ও রাস্তার কাজ শুরুর পর থেকে এ জমির দাম গিয়ে ঠেকেছে ২০-২৫ লাখে। সেতু না হতেই বিঘা প্রতি জমির দাম ৫ লাখ বেড়েছে। এটি একটি বড় অর্জন বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা থেকে সোজা কেরানীগঞ্জ, এরপর মুন্সীগঞ্জ। আর একটু গেলেই মাওয়ায় চার লেনের সংযোগ সড়ক পার করেই মূল পদ্মাসেতুতে ওঠা। প্রমত্তা পদ্মার ওপর দিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুপথ চলে শরীয়তপুরের জাজিরায় ফের ডাঙায় ফিরে আসা। সেতু যেখানে নেমে আসছে সে জায়গাটির নাম নাওডোবা, এরপর কুতুবপুর ইউনিয়ন, শিকদারকান্দি ব্রিজ, দেওয়ানকান্দি তারপর পাঁচচর ইউনিয়ন শিবপুর থানা এলাকা পর্যন্ত হয়েছে ছয় লেনের বিশাল সংযোগ সড়ক। সঙ্গে আধুনিক ব্রিজ, আন্ডারপাস, কালভার্ট। যা দিয়ে দক্ষিণের অন্যতম প্রধান বিভাগ বরিশালসহ খুলনা ও ঢাকার পাশ্ববর্তী ১৯ জেলার যাতায়াত চলে আসবে হাতের মুঠোয়, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
সম্পাদনা: এম কে রায়হান