
হ্যানয়: ফুটবল এবং জুয়ার প্রতি ভিয়েতনামিদের আসক্তির কথা সুবিদিত। এবার ইউরো ২০১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আবারও তাদের সামনে একইসঙ্গে খেলা দেখা এবং বাজি ধরার সুযোগ এনে দিয়েছে। এমনকি এর আগে ফুটবলের জন্য বাজি ধরে যারা নিজেদের বাড়ি এবং টাকা পয়সা হারিয়েছেন তাদের জন্যও।
যদিও ভিয়েতনামে বাজি ধরা অবৈধ তারপরেও প্রতিটি বড় বড় ফুটবল টুর্নামেন্টের পর পত্রিকাগুলোর পাতা বাজিতে জিতার এবং পরাজয়ের খবরে পূর্ণ থাকে। এমনকি বাজি হেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ফলাও করে বর্ণনা করা হয়।
রাজধানী হ্যানয়ের ছোট একটি ক্যাফেতে বসে নগুয়েন দ্য হোয়াং ২০১২ সালের ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের স্মৃতিচারণা করছিলেন। বর্তমানে তার দুর্দশার জন্য সেই টুর্নামেন্টকেই দায়ী করেন তিনি।
হোয়াং বর্ণনা করেন, কিভাবে সেসময় ফুটবলে বাজি ধরে সবকিছু হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ফুটবলে বাজি ধরে প্রায় ৫ লাখ ডলার হারিয়েছি আমি। দুর্ভাগ্যের কারণে দুটি বাড়ি এবং রেস্টুরেন্টও হারাতে হয়।
৫৮ বছর বয়সি এই ব্যক্তি বলেন, আমার স্ত্রী প্রচন্ডভাবে ফুটবল ঘৃণা করেন। কারণ আমাদের দুর্দশার মূলে রয়েছে এই খেলাটি।
২ সন্তানের এই পিতা বর্তমানে রাস্তার পাশে একটি খাবারের দোকানে থালা বাসন পরিস্কার করেন এবং তার স্ত্রী স্যুপ তৈরি করেন। তাদের দৈনিক আয় ১০ ডলার।
কিন্তু এতো আর্থিক দৈন্যের মধ্যেও জুয়ার প্রতি তার আসক্তি এতোটুকুও কমেনি। বরং চলতি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও তিনি বাজি ধরেছেন।
হোয়াং জানান, গত সপ্তাহে গ্রুপ পর্যায়ে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের মধ্যকার ম্যাচে তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরেন।
ভিয়েতনামে বড় বড় ফুটবল আসর যেমন বিশ্বকাপ এবং ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষে বাজী ধরার পরিমাণ বেড়ে যায়। এসময় লাখ লাখ ডলারের বাজি ধরা হয়। তবে সঠিক পরিসংখ্যান বের করা বেশ কষ্টকর। কারণ সরকারীভাবে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয় না। এছাড়া জাতির এতোবড় একটি বিষয়ে গবেষণাও খুব একটা হয়নি।
তবে চলতি মাসের শুরুতে জুয়াড়িদের আস্তানায় পুলিশি অভিযানের পর যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা থেকে হয়তো এই বিষয়ে খানিকটা আন্দাজ করা যেতে পারে। পুলিশ জানায়, একটি গ্যাং এর প্রায় ২৩ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে ৩৪০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে।
ইউরো-২০১৬ উপলক্ষে হ্যানয়ের বন্ধকী দোকানগুলো স্মার্টফোন, মোটরবাইক, গাড়ি, জমির দলিলে ভরে গেছে। নগদ টাকার জন্য এবং বাজিতে হেরে যাওয়ার ফলে যে লোকসান হচ্ছে তা পূরণের জন্য মূল্যবান এই পণ্যগুলো বন্ধক রাখা হয়েছে।
টুর্নামেন্ট শেষে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যাবেন। জুয়াড়ি এবং তাদের ভাড়াটে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকবেন। যারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন তারা ঋণদাতাদের কাছ থেকে হয়রানিসহ হুমকির সম্মুখীন হবেন।
ফুটবল এবং জুয়ার প্রতি ভিয়েতনামিদের এই আসক্তি সমাজের প্রতিটি স্তরেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও এই প্রলোভন থেকে মুক্ত নন। এমনকি পেশাদার ফুটবলাররাও জুয়ার এই নেশায় আচ্ছন্ন। সূত্র: এনডিটিভি
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফকে