
ডেস্ক: বাংলাদেশে হিন্দু পুরোহিতকে জবাই করে মুসলিম সন্ত্রাসীরা তাদের রমজান শুরু করেছে, কারো নিরাপত্তা বাংলাদেশে নেই বলে মন্তব্য করেছন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি ফেসবুকের এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার সকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় মন্দিরের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে (৭০) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপরই এই ফেসবুকে এ মন্তব্য করেন লেখিকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এক হিন্দু পুরোহিতকে জবাই করে মুসলিম সন্ত্রাসীরা তাদের রমজান শুরু করেছে। শুধু হিন্দু নয়, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদেরও খুন করা হচ্ছে। সেদিন বোরখা পরা এক হিজাবি মেয়েকে খুন করা হলো, কারণ তার স্বামী মৌলবাদ-বিরোধী। কারও নিরাপত্তা আজ বাংলাদেশে নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম যদি আরও উদার না হয়, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি মুসলিমদের। আজ বিশ্বের অগুনতি মানুষ মুসলিমদের নিন্দা করছে। অনেকে তাদের আর বিশ্বাস করছে না। মুসলিম নাম শুনেই সরে যাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে। মুসলিমরা দুনিয়া জুড়ে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কারণে অসহিষ্ণু, ঘাতক,বর্বর বলে চিহ্নিত হচ্ছে। ইসলামকে উদার করার দায়িত্ব নিতে হবে মুসলিমকেই।’
চীন সরকারের নিন্দা জানিয়ে লেখিকা বলেন, ‘সম্প্রতি চীনের সরকার চীনের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রোজা নিষিদ্ধ করেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, কর্মী ও শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কারও বেলায় অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। স্বাস্থ্যের কারণে শিক্ষার্থীদের রোজা রাখা ঠিক নয় বুঝি, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মীদের মধ্যে কমিউনিজমে এবং নাস্তিকতায় বিশ্বাসী হওয়ার শর্ত যেহেতু আছে, তাদেরও রোজা রাখাটা হয়তো উচিত নয়।
কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি সকলে তো নাস্তিক নয়, তারা যদি রোজা রাখতে চায়, তবে রোজা রাখতে তাদের কেন বাধা দেওয়া হবে? সরকার নিশ্চয়ই বোঝাতে চাইছে, রোজা রাখলে যেহেতু শরীরে ক্লান্তি এসে ভর করে, দিনের বেলায় অফিস-টাইমে সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। কিন্তু অনেকে যারা রোজা রেখেও দিব্যি ক্লান্তিহীন কাজ করে যেতে পারে, তাদের রোজা রাখার অধিকার কেন থাকবে না? সব রোজাদার তো অফিসে বসে ঝিমোয় না! চীনের সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করছি আমি।’
তসলিমা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মুসলিম না হয়েও নামাজ পড়েন, রোজা করেন। যদিও আমরা সবাই বুঝতে পারি এসব তিনি মন থেকে করেন না, মুসলিমদের ভোট পাওয়ার জন্য করেন, কিন্তু তারপরও আমি মনে করি না তার নামাজ রোজায় কারও বাধা দেওয়া উচিত। তার অধিকার আছে যে কোনও ধর্ম পালনের।
একসঙ্গে একাধিক ধর্ম পালনের অধিকার কে বলেছে কারও নেই? কোনও ধর্ম পালন না করার অধিকার যেমন মানুষের আছে, এক এবং একাধিক ধর্ম পালনের অধিকারও মানুষের আছে। তবে একটি কথা কেউ যেন ভুলে না যায় যে, রাষ্ট্রের চোখে ধর্ম পালন যে করছে এবং যে করছে না – দু’জনের গুরুত্বই সমান, দু’ব্যক্তির অধিকার সমান।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/আইকে/এসআই