
ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং ব্যবস্থার যে কথা বলা হচ্ছে তা দুরভিসন্ধিমূলক বলে অবহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকার নিজেদের অভিপ্রায় পূরণ করতেই নিজেদের ঘরের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এখন ই- ভোটিং ব্যবস্থার কথা বলে জনদৃষ্টিকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করছেন। এসময় ইভোটিং চালুর ঘোষণাকে আরেকটি তামাশার বায়োস্কোপ বলেও অভিহিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যাকে ই-ভোটিং বলা হয় সে বিষয়ে আপনাদের নিকট কিছু বলতে চাই। আপনারা জানেন-১/১১ এর সময় সাবেক সিইসি (চীফ ইলেকশন কমিশনার) এটিএম শামসুল হুদা ইভিএম চালুর প্রস্তাব করেছিলেন। তখন বুয়েটসহ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং প্রায় সব রাজনৈতিক দল সেটির বিরোধীতা করেছিল। সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদও এই পদ্ধতিটি চালুর জোর প্রচেষ্টা চালায়। পরীক্ষামূলকভাবে ২০১০ সালে প্রথম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়। ওই সময়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই পদ্ধ্রতির বিরুদ্ধে আপত্তি তোলায় ইভিএম নিয়ে কাজী রকিবউদ্দিন ইভিএম চালু থেকে সরে আসে।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও যারা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের নিয়ম চালু করেছিল, কিন্তু এই ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকায় তারা সেটি বন্ধ করে দেয়। কারণ এই পদ্ধতি দূর থেকে হ্যাক করা সম্ভব বলেই স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে এই পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে সেসব দেশে। ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করলেও এটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশে এখনও অনেক মানুষ নিরক্ষর। এতো টেকনিক্যাল বিষয় উপলব্ধি করা বা বোঝা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এই পদ্ধতিতে ই-ভোটিং এর সার্ভেয়ার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সুতরাং সরকারের জন্য ভোট ম্যানিপুলেট করা খুবই সহজ হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুই শতাব্দিরও বেশি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে থাকে। সুতরাং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ই-ভোটিং ব্যবস্থার কথা বলছেন তা নি:সন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক, জনগণের ভোটকে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে জালিয়াতি করার প্রচেষ্টা মাত্র। এটি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেল্কিবাজিরই বর্ধিত প্রকাশ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, যে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিজেদের অভিপ্রায় পূরণ করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, নিজেদের ঘরের ছেলেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছেন, সেই সরকার জনগণের ইচ্ছার সঠিক প্রতিফলন ঘটাবেন এটি কেউ বিশ্বাস করে না। বর্তমান বিনা ভোটের সরকার যদি গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করতো তাহলে আজ চারিদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে সরে যাওয়ার যে তুমুল দাবি উঠেছে সেটিকে আমলে নিয়ে সকল দলের সাথে পরামর্শ করে একজন যথার্থ নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে সাংবিধানিক এই পদটিতে বসানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতেন। কিন্তু সেটি না করে প্রধানমন্ত্রী এখন জনগণের দৃষ্টিকে সিইসি’র দিক থেকে অন্যত্র সরানোর জন্য ই-ভোটিং ব্যবস্থার আরেকটি ম্যাজিক জনগণের সামনে প্রদর্শণ করছেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর ভোটারবিহীন নির্বাচন করার আরেকটি ডিজিটাল প্রতারণা কী না তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে। যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাক্ষুধা এতো তীব্র যে, নিজেকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় রাখার জন্য তিনি গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই আওয়ামী বস্তার মধ্যে পুরে বন্ধ করে রেখে লাশ আর রক্ত স্রোত নির্বাচনী ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। সেই নির্বাচনগুলো অন্তহীন শোকমিছিলে পরিণত হয়েছে, সুতরাং তাঁর পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ই-ভোটিং চালু করার ঘোষণা জনগণকে আরেকটি তামাশার বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নয়। যদিও জনগণকে ধোঁকা দেয়ার বিদ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালভাবেই জানেন। কারণ আওয়ামী লীগ হচ্ছে নিজেদের টিকে থাকতে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও কারসাজির উপরই ভর করে। আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর ভর করে না, ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদেরকে আত্মসম্মানহীন নিপীড়কে পরিণত করে।
তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই-প্রধানমন্ত্রীর উচ্চাভিলাষের কাছে সংগ্রামী জনগণ নিজেদেরকে কখনোই সঁপে দেবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণ ক্ষমতাসীন মহলের যেকোন ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।
প্রতিবেদন: শেখ রিয়াল, সম্পাদনা: জাবেদ