
কৌশিক দাশ, বান্দরবান: পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। ইতোমধ্যে পার্বত্য জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে ছোট-বড় শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউজ, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্রামাগারগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে ভ্রমণপিপাসুদের পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধা দিতে। শহরের জেলা প্রশাসনের পরিচালিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আরো আধুনিক সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. হোসাইন আল-মুজাহিদ জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বান্দরবানে আসবে হাজারো পর্যটক। পুরো জেলা ভরে যাবে পর্যটকদের আনাগোনায় আর পর্যটকদের আনন্দময় ভ্রমণের জন্য জেলা প্রশাসন পরিচালিত পর্যটনকেন্দ্র মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও প্রান্তিক লেকে নানা ধরনের সংস্কার কাজ ও আধুনিক মনোরম নানা ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এই ঈদে বান্দরবান ভ্রমণে নিরাপত্তাও থাকবে পর্যাপ্ত।
জেলা সদর রুমা ও থানছি উপজেলার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস ইতোমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বর্ষার সূচনাতেও সারাদেশসহ বিদেশি বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা।
গত দুই বছরের মধ্যে জেলা শহরে ১০টি নতুন আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে। আধুনিক মডেল ও কারুকার্য নির্মিত হয়েছে বিলাসবহুল এসব হোটেল। সাধারণ হোটেলের দুইবেড বিশিষ্ট কক্ষ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং উন্নতমানের হোটেলগুলোতে দুইবেড বিশিষ্ট কক্ষ ভাড়া ১২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাঝারি ও উন্নতমানের হোটেলগুলোতেই পর্যটকরা আগাম বুকিং দিয়েছেন বেশি। এবার ৯ দিনের টানা ছুটির সুবাদে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটবে বান্দরবানে, এখনও পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় ঈদের আগে থেকেই পর্যটকদের আগমন ঘটবে।
জেলা শহরের অদূরে মেঘলা পর্যটন হোটেলের পরিচালক হুমায়ুন কবির, হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল গ্রীনহিলের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, তাদের হোটেলের কক্ষগুলো ৮ জুলাই থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য বুকিং রয়েছে।
পার্বত্য জেলা শহর এবং আশপাশের পর্যটন কেন্দ্র মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, আধুনিক শৈলীসমৃদ্ধ ও স্থাপত্যে অবকাঠামোয় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র, সোনালী রঙের বুদ্ধ ধাতু মন্দির, রামজাদি মন্দির, সেনানিবাসের শাপলা চত্বর, ২টি পুরানো রাজবাড়ি, শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, মেঘলায় স্থাপিত ক্যাবলকার ও ২টি ঝলুন্ত সেতু এবং মিনি চিড়িয়াখানাসহ সদরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সাজছে নতুন সাজে।
তাছাড়াও জেলার রুমা উপজেলায় রিজুক ঝর্ণা, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর পাড়া, বগালেক, ক্যাওক্রাডং, তাজিংডং, রামজু পাহাড়, সেনাবাহিনী পরিচালিত আধুনিক স্থাপত্যের নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র, থানছির উজানে সাংগু নদীর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রাজাপাথর, রেমাক্রি ঝর্ণা ও নাফাকুম পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণেও পর্যটকদের মিলবে বাড়তি আনন্দ ।
ঢাকা থেকে বান্দরবান ভ্রমণে আসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে নানা ধরনের বাস সার্ভিস। ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন সকাল ও রাতে সৌদিয়া বাস সার্ভিস, এস আলম, ইউনিক, ঈগল, শ্যামলী ও সেন্টমাটিন বাসসহ নানান বাস প্রতিদিন যাতায়াত করছে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে যারা এই ঈদে বান্দরবান ভ্রমণে আসবেন তারা চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে এসে পূরবী বা পুর্বানী বাসে করে বান্দরবান সদরে চলে আসতে পারবে মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে।
জেলা সদরের মধ্যে হোটেলে যারা অবস্থান করবে তারা হোটেল পূরবী, পূর্বানী, গ্রীনল্যান্ড, হোটেল হিল কুইন, হোটেল হিলটন, হোটেল ফোরস্টারসহ বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করতে পারবে।
জেলা সদরে যারা ভ্রমণ করতে চাইবে তারা জেলায় ব্যাটারিচালিত টমটম, সিএনজি অটোরিক্সা, মাহিন্দ্র নিয়ে ঘুরতে পারবে। আর যারা দুর্গম পাহাড়ের বিভিন্ন স্পট ভ্রমণে যেতে চাইবে তাদের জন্য প্রয়োজন মাফিক রয়েছে চাঁদের গাড়ি, ল্যান্ড রোভার জীপ, মাহিন্দ্র পিকআপ।
এদিকে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক এবং পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঈদের টানা বন্ধ ও ছুটিতে এবারও এ জেলায় কয়েক হাজার পর্যটকের আগমন ঘটতে পারে। প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যবস্থায় যাতে করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, পরিবহনের জন্যে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়া হয় এবং আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলগুলোতে ন্যায্য মূল্য বা ভাড়া আদায় করা হয় সেইজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ।
বান্দরবানে পর্যটকদের স্বাগত জানিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত প্রশাসন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/কেডি/এমএস