
ঢাকা: একুশের স্বপ্নকে তমসাচ্ছন্ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, “মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বায়ান্ন’র ২১ ফেব্রুয়ারির সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। রক্তরাঙ্গা ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক তাৎপর্যময় দিন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে এসে পুলিশের গুলিতে আত্মদান করে। তাদের এই মহিমান্বিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান। বায়ান্ন সালের ২১’শের পথ ধরেই এদেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীকারের সংগ্রাম সম্প্রসারিত হয়েছে, অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, আমরা পাই স্বাধীনতার স্বাদ।”
তিনি আরো বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সরকারী স্বীকৃতি না দিয়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এদেশের ওপর নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল-এদেশকে স্থায়ীভাবে পরাধীন রাখার জন্য। কিন্তু ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তা প্রতিরোধ করে। দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্ন মাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের ওপর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে জাতি হিসেবে আমাদের নতজানু করে রাখতে নানা কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন কায়দায় আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে মহল বিশেষের তাঁবেদারির জন্য। যাতে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে না পারি।”
“আর এইজন্যই এখন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একদলীয় দুঃশাসনের শৃঙ্খলে দেশের মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। এভাবেই আজ একুশের স্বপ্নকে তমসাচ্ছন্ন করা হয়েছে। কিন্তু একুশের অম্লান চেতনা সকল ষড়যন্ত্রকারি আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে। তাই এই দুঃসময়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রেরণা যোগাবে ৫২’র মহান একুশে’র শহীদদের আত্মদান।”
বিএনপির চেয়ারপার্সন বাণীতে আরো বলেন, “আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় এই দিবসটিতে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশ ঘটাতে অদম্য প্রেরণা লাভ করবে। মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজিত নানাবিধ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি।”
পরিশেষে তিনি ৫২’র ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিতার কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা, পাশাপাশি ভাষা সৈনিকদের শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন এবং তাঁদের পরিবারের সুখ, শান্তি ও দীর্ঘায়ূ কামনা করেন।
প্রতিবেদন: শেখ রিয়াল, সম্পাদনা: প্রণব