এক হালি ইলিশের দাম ১৩ হাজার টাকা!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, মুন্সীগঞ্জ: ইলিশের দাম হঠাৎ-ই বেড়েছে। এপ্রিলে পহেলা বৈশাখের আগে এই দাম আরও বাড়বে। যেই ক্রেতাই তার কাছে আসুক না কেন, তাকে এমনই দাম বৃদ্ধির গল্প শোনাচ্ছেন শুক্কুর মিয়া।
৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়স্ক শুক্কুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্পিডবোট ঘাটের ইলিশ বিক্রেতা। তবে কি তিনিই কম দামে ইলিশ দিচ্ছেন? উত্তরে জানালেন, এক হালি ইলিশ ১৩ হাজার টাকা
আকারে খুব একটা বড় নয়। প্রায় এক কেজির মতো ইলিশগুলো একএকটির দাম তিন হাজার টাকার বেশি! এতো দামে কে নেবে, এমন প্রশ্ন তুলতেই তিনি বলেন, ”আপনারা আসতে লেট করেছেন। এখন দুপুরের পর দাম পড়তির দিকে। সকালে আসলে দেখতেন এই ইলিশ-ই বিক্রি করেছি ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা হালিতে।”
তার এমন কথা শুনে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক ক্রেতা বললেন, ঢাকায় ইলিশের দাম এর থেকে আরও কম।
এই কথারও ব্যাখ্যা আছে শুক্কুরের কাছে। তার সঙ্গে যোগ দিলেন আরেক ইলিশ বিক্রেতা মোমেন হোসেন। তারা বলেন, ”ঢাকায় এখনও বেশিরভাগ ইলিশ ফ্রিজে রাখা। কোনোটা ককশিট ও বরফে রেখে সংরক্ষণ করা আবার কোনোটা ছিল হিমাগারে। এসবের মধ্যে এক বছর আগের ধরা থেকে শুরু করে গত পরশুর ধরাটাও আছে। এগুলো আপনারা খালি চোখে বুঝতে পারবেন না। আমাদের এই ইলিশগুলো আজ ভোরেই ধরা। আর দাম বেশি হতো না, কিন্তু বেড়েছে কারণ মার্চ-এপ্রিলে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সব মাছ ধরা যায় না। যে টুকটাক ধরা হয়- সেগুলো বিক্রি করছি।”
বাংলাদেশে ইলিশ প্রধান জেলা মোট ১৭টি। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ অন্যতম। এখানকার পদ্মার ইলিশের স্বাদই আলাদা। পদ্মা ছাড়াও মেঘনা ও যমুনা নদীতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ মেলে। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং মার্চ-এপ্রিলে ডিমের মৌসুম হওয়ায়- মা ইলিশ আর অপ্রাপ্তবয়স্ক জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধ।
এখন যদি নিষেধই হয় তবে কেন ধরা হচ্ছে? এই বিক্রেতারা জানালেন, এই সময় কেবল দেড় কেজির ওপরে ইলিশ ধরা হচ্ছে। তাদের দাবি এগুলোতে ডিমও নেই। পাইকারিভাবে এখনও ঘাটের অদূরে হাট বসে। যা ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়ে চলে সাড়ে ৬টা অব্দি। তবে সেখানে এখনও প্রশাসনের নজর খুব একটা নেই বলেই তারা জানান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জাতীয় মাছ ইলিশ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান কমপক্ষে ১২ শতাংশ। সামষ্টিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপিতে এ মাছের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। তবে নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ ধরা হলে, এই ক্ষতি দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থার ওপরই গিয়ে পড়বে বলেই মনে করেন ক্রেতা-বিক্রেতা-সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদনা: এম কে রায়হান