
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বিরোধীরা এখনো চক্রান্ত করে যাচ্ছে। চীনের জাতীয় নেতা মাও সেতুংয়ের শাসন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে, ভারতেও মহাত্মা গান্ধীকে সবাই শ্রদ্ধা করে। ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্নকেও সবাই মানে। কিন্তু বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা করতে চায় কিছু মানুষ।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলেও এর পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার না হওয়ায় আক্ষেপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ঘাতকদের বিচার পেয়েছি, তবে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অনেকের বিচার করা যায়নি। খুনিরা কেবল জাতির জনককে হত্যা করেনি। জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করেছে। কয়েকজন বিশ্বাসঘাতক এসব হত্যায় জড়িত ছিলো।’
অনুষ্ঠানে জঙ্গি তৎপরতায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জড়িত মন্তব্য করে তাদেরকে প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গুলশানে (১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা) অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমি আপনাদের শ্রদ্ধা জানাই। আপনারা সেদিন ঘটনাস্থলে পাঁচ মিনিটেই পৌঁছে গেছেন। রবিউল করিম ও সালাহউদ্দিন আহমেদ শহীদ হয়েছেন। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতেও জীবন দিয়ে মুসল্লিদের রক্ষা করেছে পুলিশ।’
দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের কোনো সদস্য আহত হলে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ঘোষণাও দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ টাকা নেয় তাহলে আমাকে জানাবেন, আমি ব্যবস্থা নেব।’ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালে আহত হলে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় ৫০ শতাংশ কমানোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে নাসিম বলেন, ‘যদি কোন হাসপাতাল ওই ছাড় না দেয় তাহলে সেটা বন্ধ করে দেবো।’
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিদেশে থাকায় বেঁচে যান তার দুই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধীতা করা জাসদের রাজনৈতিক অবস্থান ভুল ছিল। পরে প্রমাণ হয়েছে তারা ভুল ছিলো। মেজর জলিলের মত অতি বিপ্লবীরাও স্বীকার করেছেন তাদের ভুল ছিল। ওই অতি বিপ্লবীদের মত আজ যারা জঙ্গিবাদে যাচ্ছেন তারাও একদিন ভুল বুঝতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ সত্য ইতিহাস জেনেছে। এ জন্যই ১৫ আগস্টে এবার মানুষের ঢল ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেউ জাতির জনক না মানলে তার বাংলাদেশের নাগরিক থাকার অধিকার নেই। এমন নেতা যুগে যুগে না, শতাব্দীতেও আসে না। হাজার বছরে একজনই এসেছিলেন। তিনি জাতিকে মুক্ত করে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহপাক পাঠিয়েছেন জাতির মুক্তির জন্য। তিনি এ দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে সংবিধান দিয়েছেন।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশ এই রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে সর্বপ্রথম থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানি ট্যাংকের মোকাবেলার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে। বর্তমানে দেশে জঙ্গি সমস্যা সমাধানে পুলিশ জীবন বাজি রেখে সুদৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সব চাকরির কর্মঘন্টা আছে, পুলিশের কোন কর্মঘন্টা নেই।’
প্রতিবেদন: প্রীতম সাহা সুদীপ, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ