
সুন্দরগঞ্জ: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান ও কিলার আনোয়ারুল ইসলাম রানাকে গ্রেফতারের পর এবার চন্দন সরকারকে খুঁজছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চন্দন সরকার নামের ওই ব্যক্তি কিলিং মিশন সফল করতে যাবতীয় সহযোগিতা করেছে। সাবেক এমপি কাদের খানের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তার সঙ্গে চন্দনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সম্পর্কে জানা গেছে।
তারা আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের দিন এমপি লিটন যে বাসায় আছেন এবং সেখানকার প্রয়োজনীয় তথ্য খুনিদের সরবরাহ করে এই চন্দন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কিলাররা মিশন সফল করে। ইতিমধ্যেই কাদের খানের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে এবং যে পরিবহনের টিকিট কেটে কিলারদের বগুড়া থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল সে টিকিটেরও কপি পুলিশের হাতে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চন্দন সরকার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক। তিনি বামনডাঙ্গার মনমথ গ্রামের সুশীল সরকারের ছেলে। উপজেলা আওয়ামী লীগে পদ পাওয়ার পর থেকেই চন্দন নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। নানা অভিযোগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন।
সূত্র আরো জানায়, ওই ঘটনার পর চন্দন সরাসরি এমপি লিটনের বিরোধিতায় লিপ্ত হন। সুন্দরগঞ্জে লিটন বিরোধী গ্রুপের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। কাদের খানকে গ্রেফতার করার পরই চন্দন গা ঢাকা দেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কিলার আনোয়ারুল ইসলাম রানা। এর আগে পলাতক রানাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রানা সুন্দরগঞ্জের ভেলারাকাজির ভিটা গ্রামের মৃত তমসের আলীর ছেলে।
রিমান্ডে সাবেক এমপি কাদের খানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার গ্রামের বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটির খান বাড়িতে বুধবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাড়ির আমগাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে লিটন হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার বগুড়া শহরের রহমান নগরের বাড়ি থেকে কাদের খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার গাইবান্ধার আদালতে তাকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ওই দিন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, এমপি লিটন হত্যার মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ আবদুল কাদের খান। পরবর্তীতে সহজেই এমপি হতে লিটনকে খুন করেন কাদের।
গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ (মাস্টাপাড়া) এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে এক জানুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রতিবেদন: জেলা প্রতিনিধি, সম্পাদনা: প্রীতম, প্রকাশ: সজিব ঘোষ