
আসাদুজ্জামান মিলন;
ঢাকা: হস্ত শিল্প আমাদের দেশের শিল্প সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। হস্ত শিল্প বা হাতের তৈরী জিনিসপত্র আমাদের ঐতিহ্যকে ধারন করে। কালের বিবর্তনে এ সমস্ত পণ্য দ্রব্যের ব্যবহার ও ক্রেতা কমলেও আমাদের দেশ থেকে হস্ত শিল্প এখনো হারিয়ে যায়নি। তারই প্রমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্ত্বর সংলগ্ন গড়ে উঠা হস্ত শিল্পের মার্কেট।
প্রায় ৩০ বছর ধরে ঐতিহ্যকে লালন করছে এ চত্ত্বরের দোকানগুলো। বছরের প্রায় প্রতিদিন এ মার্কেটের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও পহেলা বৈশাখ, বিয়ে ইত্যাদি নানা রকমের আচার অনুষ্ঠানে এ মার্কেটে ক্রেতাদের ধুম পড়ে।
এখানে গেলেই দেখা মিলে ঘর সাজানোর সৌখিন নানান জিনিস। ছোট-বড় কয়েকটি দোকানে মাটি, কাঠ, তামা, কাঁসা, পিতল, পাট, কাপড়, বা কাগজের তৈরি নানা জিনিস পাবেন এই দোকানগুলোতে, যা আপনার অন্দরসজ্জায় এনে দেবে নান্দনিকতার ছোঁয়া।
দোকানগুলোতে এমন অনেক জিনিস পাবেন যা আপনার ঘরে এনে দেবে বাঙালিয়ানা। এখানকার মাটির জিনিসগুলোতে পাবেন টেরাকোটার কাজ। রয়েছে পোড়া মাটির একহারা গড়নে শৈল্পিকতার সংমিশ্রণ। আগে মাটির জিনিস শুকনো খাবার রাখার কাজে ব্যবহার করলেও যুগের হাওয়া বদলের সাসঙ্গে এখন মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে অনেক কিছু। ঘরের সাজসজ্জার জিনিস থেকে শুরু করে নিত্যদিনের ব্যবহারের জিনিসসহ গায়ের গহনাও তৈরি হচ্ছে মাটি দিয়ে।
এখানকার ব্যবসায়ী মসিউর বলেন, আমাদের এখানে মাটির তৈরি টব, ফুলদানি, ওয়ালম্যাট, শোপিস, নানা কারুকাজের আয়নার জন্য মাটির ফ্রেম, খাবারের পাত্র, মেয়েদের জন্য মাটির তৈরি নানা গহনা ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়।
তিনি জানান, কিছু জিনিস আসে পটুয়াখালী, শরীয়তপুর থেকে। কিছু আসে ঢাকার সাভার ও অন্যান্য জায়গা থেকে। সরাসরি কুমারদের কাছ থেকে পণ্যগুলো নিয়ে আসায় জিনিসগুলোর মান ভালো হয় এবং দামও কম বলে দাবি তার।
আরেক ব্যবসায়ী রমিজ তালুকদার জানান, এ মার্কেটে দেশিয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতারও সমাগম হয়। তারা তাদের পছন্দ মত বিভিন্ন পন্য এখান থেকে সংগ্রহ করে। এ মার্কেটের পন্য দ্রব্যের দেশের বাইরেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারমধ্যে বেতের তৈরী ঝুড়ি ও পাটের ব্যাগ অন্যতম।
১৯৯৬ সালে ঢাকা মহানগরী মৃৎশিল্প ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সাথে সম্পৃক্ত হয়। স্বল্প পুঁজি, দেশিয় কাঁচামাল ও সহজে তৈরী করা যায় বলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ স্বস্তি দেখা যায়। আমাদের দেশের শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রণালয় নানা রকম স্বল্প মেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা রেখেছে এসব ব্যবসায়ের সাথে জড়িতদের জন্য। দেশের ঐতিহ্য রক্ষায় এ সমস্ত পন্যদ্রব্য ব্যবহারে সঠিক প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো হারিয়ে যেতে বসা এ হস্ত শিল্প তার পুরোনো রূপ ফিরে পাবে বলে জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা।
সম্পাদনা: এম কে আর