
ডেস্ক: ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান। জীবদ্দশায় উকিলের মুহুরী, সরকারি কেরানি, সাংবাদিক, সম্পাদক নানা পেশায় নিযুক্ত থাকলেও, পৃথিবী আজও স্মরণ করে তাকে কবি সত্ত্বাকে। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছিল জীবনের নিগুঢ় অর্থ,মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা।
তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘সং অফ মাইসেলফ’ এর কয়েকটি অংশের অনুবাদের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করার ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের।
মুঠোভরা ঘাস হাতে শিশুটি জানতে চায়, ‘ঘাস কি?’
আমি কি উত্তর দেবো?
এ ব্যাপারে আমি শিশুটির চেয়ে বেশী কিছু জানি না।
মনে হয় আশাবাদী সবুজ বুননের মাঝে
এ আমার কর্তৃত্বাধীনতার পতাকা
অথবা এটি হয়তো স্রষ্টার রুমাল
একটি সুগন্ধিযুক্ত উপহার, পরিকল্পিত পতনের স্মারক
এক কোনায় লেখা মালিকের নাম তাতে
যা দেখে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি ‘কার?’
অথবা, ধরে নেয়া যায় ঘাস নিজেই এক সন্তান,
সবুজায়নের ভালোবাসার ফসল।
হয়তো এটি কোন অতিপ্রাচীন চিত্রলিপি
যার মানে, ‘বিস্তীর্ণ প্রান্তর বা সরু মাটির পথ,
কালো চামড়া বা সাদা চামড়া, সবার সাথে আমি বেড়ে উঠি
কানুক, টাকাহো, কংগ্রেসম্যান, কাফ
সবার জন্য আমি অভিন্ন।’
আবার এখন মনে হচ্ছে
ঘাসগুলো সমাধির অগোছালো কেশবিন্যাস, ছাঁটা হয়নি বহুদিন!
কুঁচকে থাকা ঘাস, তুমি
হয়তো কোন যুবকের বুক থেকে বাষ্পাকারে নির্গত
যাকে চিনলে আমি হয়তো ভালোবেসে ফেলতাম,
হয়তো তুমি কোন বৃদ্ধের পূনর্জন্ম
অথবা কোন দুধের বাচ্চা,
মায়ের কোল থেকে যাকে তাড়াহুড়ো করে কেড়ে নেয়া হয়েছে
অথবা তুমিই সেই মায়ের কোল।
বৃদ্ধা মায়ের সাদা চুলের চেয়েও প্রগাড় তুমি
এমনকি বৃদ্ধের রঙহীন দাড়ির চেয়েও
মুখের লালচে তালু থেকে জন্ম নেয়া সন্তানের চেয়েও অন্ধকার।
যদি আমি মৃত্যুর অর্থ খুঁজে পেতাম!
যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মা বা শিশুর মৃত্যু!
তোমার কি মনে হয়? মৃতেরা কোথায়?
তারা বেঁচে আছে, কোথাও না কোথাও ভাল আছে।
ঘাসের ডগা আমায় শেখায়, মৃত্যু বলে কিছু নেই
আছে কেবল জীবনের রূপ বদল
এবং মৃত্যুবরণ এক ধরনের সৌভাগ্যের প্রতীক
ধারণা বহির্ভুত এক অভিজ্ঞতা।
কারো কাছে কখনো কি মনে হয়েছে
জন্মগ্রহণ করাটা ভাগ্যের ব্যাপার?
তাকে আমি শীঘ্রই জানাতে চাই
মৃত্যুও এক বিশাল সৌভাগ্য, আমি জানি।
প্রত্যেক মৃতের সাথে আমি মরি,
সদ্যজন্মা প্রতিটি শিশুর সাথে আমি জন্মাই
আমার টুপি আর বুটের মাঝে আমি আর আটকে নেই।
অন্ধ ভালোবাসার দঙ্গল স্পর্শ,
তরবারির খাপে তীক্ষ্ণ দাঁতের ছোঁয়া
আমায় ছেড়ে যাওয়ায় কি তোমারো ব্যাথা হয়?
মিলনের পথ ধরে বিচ্ছেদ পৌঁছায়,
যেন শাশ্বত ঋণের অনন্ত শোধ
যেমন বৃষ্টি আর ঝর্ণার আন্তঃসম্পর্ক
যাদের ভালবাসা গ্রহণ করে মঞ্জরী
বেড়ে ওঠে ফুটপাথের কিনারে, উর্বর জীবন
দৃষ্টির সীমানায় আনে পূর্ণাঙ্গ, পুরুষালি এবং সোনালী দিগন্ত।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকে/এসআই