
ঢাকা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিশীল সমুদ্রে বাঙালিরা সর্বদাই হারিয়ে যায়। মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও সৃষ্টিশীল ছিলেন কবিগুরু। জোড়াসাঁকোয় রোগশয্যায় শুয়ে শুয়েও তিনি বলতেন, আর রানী চন্দ তা কবিতার ছন্দে লিখে নিতেন ।
কবি বলেই গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের কয়েক দিন আগে ১৪ শ্রাবণ। রানী চন্দ সে দিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি।’
শনিবার (বাইশে শ্রাবণ) কবিগুরুর ৭৫তম প্রয়াণ দিবস। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত হয়েছিল তার।
কবিগুরুর প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। অজস্র রচনায় বাংলার বর্ষাকে তিনি অনিন্দ্যসৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। বৃষ্টির অজস্র জলধারায় পরিপুষ্ট তার বিচিত্র রচনাসম্ভার। এই বর্ষা ঋতুতেই চিরবিদায় নেন তিনি।
আধুনিক বাঙালির রুচির নির্মাতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রায় একক প্রতিভায় বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে। কাব্য, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনিসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা তার প্রতিভার স্পর্শে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছিল। বাঙালির হূদয়ানুভূতি ও অভিব্যক্তির সার্থক প্রকাশ ঘটেছে তার বিপুল রচনায়। তার বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভার মহৎ মানবিক আবেদনের মহিমায় হয়ে উঠেছে কালজয়ী।
১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি গভীর আগ্রহে চিত্রকলা চর্চা শুরু করেন। তার এসব কাজ ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করেছে।
সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মে নিজেকে জীবনব্যাপী সক্রিয় রেখে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। তার কর্ম, চিন্তা বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রায় অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। তার গান আমাদের জাতীয় সংগীত।
শারীরিকভাবে তিনি অনুপস্থিত হলেও দিনে দিনে বাঙালির মন-মানসে তার উপস্থিতি প্রতিনিয়তই স্পষ্ট, দীপ্তিমান ও অনিবার্য হয়ে উঠছে। শনিবার কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করবে।
বিশ্বকবির ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শনিবার বিকেল ৪ টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আহমদ রফিক রচিত রবীন্দ্রজীবন (তৃতীয় খন্ড)-এর প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
দ্বিতীয় দিন রোববার বিকেল ৪ টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে একক বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রবীন্দ্রপুরস্কার-২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রবীন্দ্রবিষয়ক একক বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
এ বছর রবীন্দ্রপুরস্কার প্রদান করা হবে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন এবং শিল্পী তপন মাহমুদকে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে। বিশ্ব কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশনও শনিবার বিশেষ নাটক এবং অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস