
তাইমুর মাহমুদ শমীক: আজ মীনা কুমারীর জন্মদিন। ভারতে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সাড়া জাগানো এই নায়িকা ভালো একজন কবিও ছিলেন। চার চারবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে এই অভিনেত্রী তৎকালীন সময়ে নিজেকেই নিজে চলচ্চিত্র অঙ্গনে চ্যালেঞ্জ জানাবার মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। মূলত ট্র্যাজিক সব চরিত্রে অভিনয় করতেন তিনি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো।
১৯৫২ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র পরিচালক কামাল আমরোহির সাথে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। কামালের বয়স তখন ৩৪, মীনার ১৯ বছর। এর আগেই কামাল আরেকটা বিয়ে করেছিলেন এবং সে ঘরে সন্তান ছিলো তিনজন। এতো বড় একটা তথ্য কামাল মীনার কাছ থেকে গোপন করতে চেয়েছিলেন প্রথম থেকেই। পরিণতিতে একসময় এই গুরুতর খবর জানাজানি হয়ে যায় এবং মীনার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে চাপ দেয়া হয় ডিভোর্সের। কিন্তু মীনা মন থেকে চেয়েছিলেন বর কামাল আমরোহির সাথে বাকি জীবনটা কাটাবার। সত্যিকারভাবে ভালোবাসায় মীনা তার জীবনসঙ্গীকে ডাকতেন চন্দন নামে। কামাল তাকে ডাকতেন মঞ্জু।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না। ১৯৬৪ সালের ৫ই মার্চ ‘পিঞ্জর কি পাঞ্চি’ ছবির মহরতে কামালের অ্যাসিস্ট্যান্ট বকর মীনা কুমারীর গালে চড় বসায়। বিখ্যাত কবি, গীতিকার গুলজারকে তার মেকআপ রুমে ঢুকতে কেন দেয়া হচ্ছে না এমন তুচ্ছ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে। মীনা তারপর বলেছিলো কামাল সাহেবকে যেন জানিয়ে দেয়া হয়, আজ রাতে আমি বাড়ি ফিরবো না এবং মীনা তার কথা রেখেছিলেন। এর মাঝে ভীষণভাবে তিনি অ্যালকোহলিক হয়ে যান। প্রথাগতভাবে ডিভোর্স না হলেও মিনা আর কামালের মাঝে ১৯৬৪ সালেই আনঅফিশিয়ালি ডিভোর্স হয়ে যায়।
গুরুতর লিভারের অসুখে আক্রান্ত হয়ে মীনা লন্ডনে চিকিৎসা করতে পাড়ি দেন ১৯৬৮ সালে। চলচ্চিত্র ‘পাকিজা’ মুক্তি পাবার তিন সপ্তাহ পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে মীনা ১৯৭২ সালের ২৮ই মার্চ এলিজাবেথ নার্সিং হোমে ভর্তি হন। তারপর দিন কোমায় চলে যাবার আগে তিনি কামালকে বলেছিলেন, ‘আর বেশিদিন বাঁচবো না। আমার শেষ ইচ্ছা যেন তোমার কোলে মাথা রেখে মরতে পারি।’
ভারতের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী মৃত্যুবরণ করেন তার ঠিক দুইদিন পর শুক্রবারে। শোকের এক আবহ নেমে এসেছিলো পুরো ভারত জুড়ে। এক কিংবদন্তির মৃত্যুতে সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো ভারতীয় চলচ্চিত্রকে ভালোবাসা পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা মানুষ। সাহেব বিবি অউর গোলাম, পাকিজা, মেরে আপনে, আর্তি, পরিণীতার মতো সাড়া জাগানো সব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মানুষের জীবনে চিরস্থায়ীভাবে আসন পোক্ত করে নেয়া এই অভিনেত্রী আজকের দিনে জন্মে আগস্ট মাসের প্রথম দিনটাকেই যেন আলোকিত করে গিয়েছেন। কবিতার মতো সুন্দর এই মানুষটার সব অর্জনের প্রতি রইলো অকুন্ঠ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, মায়া।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/টিএমএস/টিএস