
ফারহানা করিম, ঢাকা: যারা কাঁঠাল কখনো দেখেননি তারা হয়তো বাইরে থেকে বিশালাকৃতির এই ফলটিকে দেখলে একে জুরাসিক যুগের কোন ফল বলে বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু আমাদের জাতীয় এই ফলটিকে অলৌকিক ফল হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলের মানুষদের ক্ষুধা নিবৃত্তির কাজে কাঁঠালকে দিব্যি কাজে লাগানো যেতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম ফল হিসেবে কাঁঠালকে বিবেচনা করা হয়। এর ওজন সাধারণত ৮ থেকে ৮০ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। কাঁঠালের রসালো কোষ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি ভিটামিন সি’তে ভরপুর।
কাঁঠালের বীচিতে রয়েছে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন যা দৈহিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মূলত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় ফল কাঁঠাল। শিকাগো বোটানিক গার্ডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নাইরি জেরেগা বাংলাদেশের কাঁঠালের জিন বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে জানান, কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আমের পরেই এর অবস্থান। ফল এবং কাঠের জন্য যাদের বাড়িতে সামান্য জায়গা আছে তারাই কাঁঠাল গাছ লাগিয়ে থাকেন।
রসালো সুস্বাদু ফল ছাড়াও কাঁঠাল গাছ থেকে আরো পাওয়া যায়-
- কাঁঠাল পাতা যা ছাগলসহ অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- গাছের বাকলের কমলা রঙ ঐতিহ্যগতভাবে সন্নাসীদের পোশাক রাঙানোর কাজে লাগে।
- কাঁঠাল গাছের আঠা গ্লু’র বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- এছাড়া এই গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন আসবাবও বানানো হয়।
প্রতিটি কাঁঠাল গাছে সর্বোচ্চ ১৫০ টির মত ফল উৎপাদিত হয়। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর কৃষিবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি গবেষক শামালা রেড্ডি বলেন, ‘কাঁঠাল একটি অলৌকিক ফল এতে প্রচুর পুষ্টি এবং ক্যালোরি রয়েছে।’
কেউ যদি একেবারে ১০-১২টি কাঁঠাল কোষ খেয়ে থাকেন তাহলে তাকে আধাবেলা কিছু না খেয়ে থাকলেও চলবে।
পাকা এবং কাঁচা উভয় প্রকারেই কাঁঠাল খাওয়া যায়। পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে এটিকে খাওয়া হয়। আবার কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে তরকারি রান্না করা যায়। এই তরকারির স্বাদ অনেকটা মাংসের মত লাগে বলে মাংসের বিকল্প হিসেবে অনেকে কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খান।
এছাড়া পিঠা, চিপস, আইসক্রিম তৈরিতে কাঁঠাল ব্যবহৃত হয়। কাঁঠালের শুকনো বীচি যেমন ভেজে খাওয়া যায় আবার এটি দিয়ে তরকারিও রান্না করা যায়। এছাড়া বীচি শুকিয়ে চূর্ণ করে ময়দা বানানো হয়।
তবে ফল পাকার পর কাঁঠাল বেশিদিন রাখা যায় না। ঢাকনা যুক্ত পাত্রে কাঁঠালের কোষ রেখে অথবা শুকনো করেও এটি সংরক্ষণ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে কাঁঠালের তেমন পরিচিতি নেই তবে সেখানকার নিরামিষভোজীদের কাছে এই ফলটির সমাদর রয়েছে। শুকরের মাংসের মত স্বাদ থাকায় তারা কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খায়। এছাড়া দেশটিতে কাঁঠালের স্যান্ডউইচের চাহিদাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাঁঠালের জনপ্রিয়তা থাকলেও কাঁঠালের আদিভুমি হিসেবে পরিচিত ভারতে এর জনপ্রিয়তা একেবারে শুণ্যের কোঠায় বলা যেতে পারে।
দেশটিতে উৎপাদিত কাঁঠালের শতকরা ৭৫ ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। ‘গরীবের খাদ্য’ এই বদনামের কারণে কাঁঠাল খেতে অনিচ্ছুক ভারতবাসী। জেরেগা বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে কাঁঠালকে গরীবের খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ভারতের অনেক অঞ্চলেই যেখানে সেখানে এই গাছটি জন্মাতে দেখা যায়। তাই অনেকেই এটি কিনে খাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না।’
কেরালার একটি পত্রিকার সম্পাদক শ্রী পাদ্রে বলেন, ‘আমাদের দেশে সিংহভাগ কাঁঠাল পচে নষ্ট হয়ে যায়। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন কাঁঠাল থেকে প্রচুর অর্থ আয় করে। শ্রীলংকায় কাঁঠাল গাছকে ধান গাছের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু কাঁঠালের আদি জন্মভূমি ভারতে আমরা এখনও ফলটির মর্যাদা বুঝতে পারছি না।’ সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফকে/এসআই