
ঢাকা: মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট-এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের পরীক্ষায় মোট ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন। ২০১৮ সালের তুলনায় এ বছর এক লাখ তিন হাজার ৪৩৪ জন শিক্ষার্থী বেশি পরীক্ষা দেবে।
এবার আটটি সাধারণ বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ লাখ ১০২ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে তিন লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন এবং কারিগরি ভোকেশনাল এক লাখ ২৫ হাজার ৫৯ জন রয়েছে। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা তিন হাজার ৪৯৭ এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৮২টি। এ ছাড়াও বিদেশি আটটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৪৩৪ জন্য পরীক্ষার্থী রয়েছে।
পরীক্ষার দিন সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর আশকোনার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন।
এসএসসি পরীক্ষাকে ঘিরে যা রয়েছে নির্দেশনায়
এবারও এসএসসি পরীক্ষা সকাল ১০ থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেলের পরীক্ষা বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। সব পরীক্ষার্থীকে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও পরীক্ষার ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্নেপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া (ছবি তোলা যায় না এমন ফোন) অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
এদিকে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করার জন্য এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম-বার, পিপিএম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/১৯৭৬)-এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের অনধিকার প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং এই আদেশ আগামী ০২/০২/২০১৯ থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনগুলোতে পরীক্ষা চলাকালীন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এদিকে, এবারের নতুন সরকারের নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রথম চ্যালেঞ্জ এবারের এসএসসি পরীক্ষা। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাকেও অনেকটা বসতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষায়। আর সে পরীক্ষা হচ্ছে-প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। অনেকে বলছেন, এটা তার জন্য এসিড টেস্ট। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তার সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। আগামীকাল শনিবার শুরু হতে যাওয়া এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় এবারও প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা রয়েছে কিন্তু সেই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধে নতুন শিক্ষামন্ত্রী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তা-ই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।
টানা ১০ বছর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন সদ্য বিদায় নেওয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নানা পদক্ষেপ, নানা হুঙ্কার-ডঙ্কারেও প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে পারেননি তিনি। এমন কোনো পাবলিক পরীক্ষা ছিল না, যে পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষা প্রশাসনের সব ধরনের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ব্যূহ ভেদ করে ঠিকই প্রশ্ন ফাঁস করেছে বিভিন্ন চক্র। দেশব্যাপী বিস্তৃত প্রশ্ন ফাঁস চক্রের নেটওয়ার্কের কাছে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছে মন্ত্রণালয়। ফলে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির পাশাপাশি প্রশ্ন ফাঁসের কলঙ্ক নিয়ে যেমন বিদায় নিতে হয়েছে নুরুল ইসলাম নাহিদকে তেমনি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বারবার বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে সরকারকেও।
এ পরীক্ষা যদি প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত করা যায় তবে তাদের সূচনাটা ভালোই হবে এবং নতুন সরকারও তাদের প্রথম কৃতিত্ব দাবি করতে পারবে। প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরীক্ষা উপহার দিতে পারলে সরকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝেও একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে। সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তেমনটিই চাইছে। এজন্য ইতোমধ্যে প্রশ্ন ফাঁস রোধে কড়াকড়ি অবস্থান নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১০ বছরে শিক্ষা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে দুর্নীতিগ্রস্ত চক্র গেঁড়ে বসেছে তাদের কারণেই প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোচিং সেন্টারগুলোর যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন সময়। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে কোচিং সেন্টারগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী বলেও মনে করেন অনেকে। ফলে পরীক্ষা চলাকালীন কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এখন প্রশ্ন ফাঁস রোধ এবং এর মূলোৎপাটনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয় তার দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে দুর্নীতিবাজ চক্র দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসেছে তাদের মোকাবেলা করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কতটা সফল হন এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ জেতেন তা-ই দেখার বিষয়।
এম কে রায়হান