
ডেস্কঃ মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পুরোদস্তুর পেশাদার শিল্পী হয়ে ওঠা, ১৩ বছর বয়সে প্রথম একক স্টুডিও এ্যালবাম। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে এমটিভি টপ চার্টে লম্বা সময়ের জন্য নিজের স্থান দখল। গানের পাশাপাশি চমকপ্রদ মিউজিক ভিডিও, চিরস্মরণীয় স্টেজ পারফর্মেন্স, ‘মুনওয়াকিং’ নামক বিশেষ কোরিওগ্রাফি, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয়, ব্যতিক্রমধর্মী ফ্যাশন ও রূপচর্চা, চেহারার আদল ও বর্ণ পাল্টাতে প্লাস্টিক সার্জারি, যৌন নিগ্রহের অভিযোগ, ক্যান্সার ও লিউকোমিয়া রোগীদের জন্য ইনস্টিটিউট, দূর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে সহায়তা প্রদান, নিজ অর্থায়নে বিশ্বব্যাপী বেকারদের কর্মসংস্থান, উন্মাতাল পাগলপারা ভক্তবৃন্দ; এত সব কিছু ঘিরেই মাইকেল জ্যাকসন।
বাবা মা জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন ও ক্যাথরিন জ্যাকসনের পঞ্চম সন্তান মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের জন্ম ২৯ আগস্ট, ১৯৫৮, গ্যারি ইন্ডিয়ানায়। ভক্তবৃন্দের জগতে ‘পপসম্রাট’ নামেই বিশেষভাবে খ্যাত। পারিবারিক ব্যান্ডদল ‘জ্যাকসন ফাইভ’ এর সাথে মঞ্চের হাতেখড়ি, তাদের সাথেই প্রথম উত্থান। জেমস ব্রাউন, স্যামি ডেভিস জুনিয়র, মার্ভিন গ্রে, জ্যাকি উইলসন, জেন কোল এবং ফ্রেন্ড অ্যাসটেয়ার মতো শিল্পীরা ছিল মাইকেলের আইডল। একের পর এক ট্যালেন্ট হান্ট ভিত্তিক অনুষ্ঠান কাঁপিয়ে সংগীত বিশ্বের ইতিহাসে নিজের নাম অমোচনীয় কালিতে লিখিয়ে নিতে দেরী হয়নি। স্বাক্ষর রেখেছেন পপ, রক অ্যান্ড ব্লুস, সৌল, ফাঙ্ক, ডিস্কো ইত্যাদি ধারায়। নিজের মোহনীয় কন্ঠের দ্বারা অর্জন করেছেন অঢেল সম্পত্তি, প্রেম ও সম্মান।
১৯৭২ সালে তার সোলো ব্যতিক্রমী গান ‘বিইএন’ চার্টের এক নম্বরে জায়গা করে নেয়। ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই সঙ্গে আটটি গ্র্যামি জয় করে সংগীত ইন্ডাস্ট্রির প্রচলিত সব ধারা বদলে দেন। ‘মো টাউন রেকর্ড’ কোম্পানির রজতজয়ন্তী পালনের সময় মাইকেলের দাবীতে থ্রিলারের একটি গানে এককভাবে পারফর্ম করতে দেয়া হয়। ১৬ মে, ১৯৮৩ সালের সন্ধ্যার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ৪৭ মিলিয়ন আমেরিকান অবাক-বিস্ময়ে দেখে মাইকেল জ্যাকসন ও তার মুনওয়াকিং। প্যাসাডোনা সিভিক অডিটোরিয়ামে বিলি জিন গানটির সঙ্গে মাইকেল যখন পারফর্ম করছিলেন, উপস্থিত প্রতিটি দর্শক চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছিলেন। যেন এই মন্ত্রমুগ্ধকর চার মিনিটের একটি মুহূর্তও অদেখা চলে না যায়।
২০০৯ সালের এই দিনে, অর্থাৎ ২৫ জুন, মাত্র ৫০ বছর বয়সে ব্যক্তিগত ডাক্তারের উপস্থিতিতে তারই দেওয়া ঘুমের ওষুধের ওভার ডোজে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রী হয় তার ৮.২ মিলিয়ন কপি এ্যালবাম, বিশ্বব্যাপী যে সংখ্যা ৩৫ মিলিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রীত ২০টি এ্যালবামের মধ্যে মাইকেলের এ্যালবাম রয়েছে চারটি।
মৃত্যুর আগে তিনি নিজের ‘দিস ইস ইট’ শিরোনামের কনসার্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সশরীরে আর কখনো তাকে দেখা না গেলেও মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাওয়ার জন্য জগতের সমস্ত সময়টুকুও পর্যাপ্ত নয়, কারন কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকেএস/টিএস