
“আমরা শুধু এইটুকু বলতে পারি, যে স্তালিনের মৃত্যু সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ের চাপা আগুন উস্কে দিয়েছিল, যে লড়াইয়ে বেরিয়াকে কুপোকাত করে জয়ী হয়েছিলেন ক্রুশ্চভ, আর সকলেই বোধহয় জানেন, যে ইতিহাস সর্বদাই রচনা করেন বিজয়ীরা।”—মনজুরুল হক/ স্তালিন মিথ্যাচার এবং প্রাসঙ্গিকতা।
আরাফাত শান্ত: আজ খুব সকালে উঠে শেষ করলাম—‘স্তালিন মিথ্যাচার এবং প্রাসঙ্গিকতা’। মনজুর ভাইয়ের লেখার ভক্ত আমি ব্লগের দিন থেকেই। লেখকের ‘স্লিপিং উইথ আর্মস’ বইটা আমার খুব প্রিয়। একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধে যাওয়ার অসাধারণ গল্প ও তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো কেমন ছিল তা জানার দারুণ এক বই।
স্তালিন নিয়ে প্রচলিত যে মিথগুলো হাটে মাঠে ঘাটে শুনবেন, বিদ্বান ব্যাক্তি—খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবিরাও চাবাতে চাবাতে বলেন প্রায়শই, লেখক সেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। পশ্চিমা কিছু লেখকের কত বেস্টসেলিং বই মারাত্মক ভাবে ভুয়া তথ্য ভরা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। লেনিনের পর কী কী অপ্রতিরোধ্য সব দূর্যোগ স্তালিন মোকাবেলা করেছেন তা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছেন।
একদিকে প্রতিবিপ্লব, আরেকদিকে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ডওয়ারের দগদগে ক্ষত এবং সব সময় পশ্চিমা মিডিয়ার ভয়াবহ সব অপপ্রচার মোকাবেলা করেছেন শক্ত হাতে। মাঝেমাঝে যে বাড়াবাড়ি হয়নি তা না, তবে যে ‘মিলিয়ন মিলিয়ন’ মানুষের মৃত্যুর যে ধুয়ো তোলা হয় তা কত বড় ধাপ্পাবাজি সেটা প্রমাণ করতে সামান্য কাণ্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে বেনিয়া বুদ্ধিজীবীরা আজব সব তথ্য হাজির করে বিভ্রান্ত করেছে সবাইকে।
আমার মনে পড়ে যায়, টিভিতে চ্যানেল পাল্টানোর সময় জাকির নায়েক বলছিলেন, রুশরা কিভাবে মানুষ মেরে কমিউনিজম কায়েম করেছে, যে তথ্য উনি দিয়েছেন সেই কথাগুলো কি নিম্নমানের তা ভাবলে হাসি আসে। এইসব কথাবার্তায় অবশ্য পুঁজিবাদী-বুর্জোয়া-ইসলামিক সবার এক সুর।
বইটা আমার কাছে অন্যরকম লেগেছে। প্রচলিত যে ধারণা তার বাইরে নতুন কিছু পড়া। লেখক ফ্ল্যাপে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনে করেন সমাজতন্ত্রই শোষণ মুক্তির পথে, তিনি এখনো সেই বিশ্বাসেই বেঁচে আছেন। সমাজতন্ত্রে আমার সেরকম ইমান না থাকলেও লেখকের প্রতি আমার বিশ্বাস টনটনে। তিনি লেখায়-জীবনে-বেঁচে থাকায় একজন খাঁটি সমাজতন্ত্রী।

লেখক: আরাফাত শান্ত।