
ঢাকা: মূলত দু’টি কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে আইএস (ইসলামিক স্টেট)। যার একটি এ দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা, অপরটি স্থানীয় উগ্রবাদীদের হাতে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়ে চলা। দেশটির এই পরিস্থিতি আইএস’র উদ্দেশ্যের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে তাদের মুখপাত্র ‘দাবিক’।
ম্যাগজিনটির রজব সংখ্যার সর্বশেষ সংস্করণে ‘আমির অব দ্য খলিফাস সোলজার ইন বেঙ্গল’ বা বাংলায় খলিফার সৈন্যদের নেতা আখ্যা পাওয়া শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ ওরফে তামিম চৌধুরী তার সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘নিজেদের সম্প্রসারণের জন্য ইসলামিক এস্টেট বাংলাদেশকে তাদের একটি পদানত রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে চরমপন্থীদের দ্বারা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ দ্রুতই বেড়ে চলেছে।’
এখানে উল্লেখ্য শুধু ২০১৫ সালেই বাংলাদেশে কমপক্ষে ২৬২টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৩৯ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৪ জন সংখ্যালঘু নারী, যাদের মধ্যে ৯ জনকে জোর করে ধর্মান্তকরণ করা হয়েছে। এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আরো ২৫ জন। তাদের মধ্যে ১০ জন গণধর্ষণের শিকার এবং দুই জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন চার জন, তাদের মধ্যে একজনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন এক সংখ্যালঘু নারী। জমিজমা, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ২০৯টি। এর মধ্যে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে ৬০ পরিবার। সংখ্যালঘুদের ৩১টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৮০টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য দিয়েছে।
ওদিকে একই সাক্ষাতকারে আল-হানিফ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জিহাদ নির্ভর একটি পরিকল্পনা তরান্বিত হবে। ভারতে গেরিলা আক্রমণের রূপে এবং এমন আক্রমণ মায়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আরো বড় ধরণের আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে অগ্রসর ভূমিকা রাখবে।’
দাবিক’র দাবি অনুযায়ী আল-হানিফই বাংলাদেশে আইএস’র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে হানিফের প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। তার আসল নাম তামিম চৌধুরী। তিনি যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক সে বিষয়টি প্রকাশ করে লেবাননের ইংরেজি পত্রিকা দি ডেইলি স্টার। পরে কানাডার ভাইস নিউজসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে, সে দেশে পুলিশের হয়রানির শিকার হয়ে বাংলাদেশে চলে গেছেন তামিম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আরো বলছে, তামিমের পুরো নাম এখন আলিয়াস শায়েখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে একের পর এক গুপ্তহত্যা ঘটছে।
দাবিক’র কাছে আল হানিফ দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশে আইএসআইএস বাহিনীর আত্মপ্রকাশ সাধারন কাফেরদের (অবিশ্বাসীদের) ভয় দেখাতে সমর্থ হয়েছে। বিশেষত আমরা নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষদের ভয় দেখাতে পেরেছি, যারা ইসলাম ও প্রিয় মহানবীকে নিয়ে উপহাস করে। কিন্তু আল্লাহর শত্রুদের নিছক ভীতি প্রদর্শনের এই পদ্ধতি খিলাফতের সৈনিকদের নিয়ম নয়। বরং আমাদের কর্মের মাধ্যমেই কথা বলা উচিত’। হানিফ আরো বলেন, ‘আমাদের সৈনিকরা ক্রমাগত চাপাতি শান দিচ্ছে নাস্তিকদের এবং অন্য সকল ধর্মত্যাগীদের শিরোচ্ছেদের লক্ষ্যে, যারা উপহাস করে নবীকে নিয়ে’। বাংলাদেশে নিজের শক্তিমত্তার ব্যাপারে আল-হানিফ বলেন, ‘অনেক মুসলিম আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সৈনিক পদে খেলাফতে যোগ দিচ্ছে’।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এসকে/এসজি