Thursday, December 7th, 2023
কেলেঙ্কারি (পর্ব ১)
October 16th, 2016 at 9:27 pm
কেলেঙ্কারি (পর্ব ১)

প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: বিশ্বজুড়ে নানা সময় নানা ধরনের স্ক্যান্ডাল আর কেলেঙ্কারির অবতারণা হয়েছে। মানুষের আগ্রহ এবং গণমাধ্যমের কল্যাণে সেগুলো খুব দ্রুত প্রসারও লাভ করেছে। এসব স্ক্যান্ডালের কোনোটি ব্যাক্তিগত, কোনোটি পারিবারিক আবার কোনোটি পুরোপুরি রাজনৈতিক। অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনাও ঘটেছে হরহামেশা।

দুনিয়া কাঁপানো বিভিন্ন কেলেঙ্কারির আদ্যোপান্ত জানাতেই নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ (রোববার) দেখুন এর প্রথম পর্ব।    

কেবল সমাজের পদস্থ লোকজনের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়, বিভিন্ন দেশের বিশ্বনেতারাও নানা সময় কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। তাদের সেই কেলেঙ্কারি কারো কারো রাজনৈতিক মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে।

bofors-scandal-2

আশির দশকে ভারত সরকার সুইডেন থেকে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ-সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। সুইডেনের একটি অস্ত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- বোফোর্স কোম্পানি। ভারত ১৩০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের অস্ত্র সরবরাহের ব্যবসা পাওয়ার আশায় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ প্রদান করে; কিন্তু ঘটনাক্রমে পত্রিকা মারফত সবিস্তারে তা প্রকাশিত হলে ভারত সরকার ও বোফর্স কোম্পানি উভয়ই তা অস্বীকার করে।

এছাড়া পশ্চিম জার্মানি থেকে ৪৩০ কোটি রুপি মূল্যের সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তিতে কয়েকজন ভারতীয় এজেন্ট ৩০ কোটি রুপি দালালি হিসেবে কমিশন লাভ করেন। বিষয়টি সংবাদপত্রে আসার আগেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। যার কারণে পরবর্তীতে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।

এ কেলেঙ্কারি ও মামলার পরই দেশজুড়ে স্লোগান উঠেছিল, ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়’। ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রধান ইস্যু ছিল বোফোর্স কেলেঙ্কারি। যার জেরে ক্ষমতা হারাতে হয় রাজীব গান্ধীকে।

bofors-scandal

বোফোর্স কেলেঙ্কারি

মার্চ, ১৯৮৬: চারশটি ১৫৫ মিলিমিটার হাউইৎজার কামান কেনার জন্য সুইডেনের এ বি বোফোর্স সংস্থার সঙ্গে এক হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার চুক্তি সই করে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এপ্রিল, ১৯৮৭: সুইডিশ রেডিও একটি চাঞ্চল্যকর ঘোষণা জানায়, এতে বলা হয় চুক্তি পাকা করার জন্য ভারতীয় রাজনীতিক ও প্রতিরক্ষার ক্ষমতাশালী অফিসারদের ঘুষ দিয়েছে বোফর্স।

২২ অক্টোবর ১৯৯৯: উইন চাড্ডা, ইতালীয় নাগরিক অত্তাভিও কুয়াতারোচ্চি, সাবেক ভারতীয় প্রতিরক্ষা সচিব এস কে ভাটনাগর, সাবেক বোফর্স প্রধান মার্টিন আর্টবো এবং বোফর্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিবিআই। চার্জশিটে রাজীব গান্ধীর নাম উল্লেখ থাকলেও তাকে বিচারের জন্য পেশ করা যায়নি কারণ এর আগেই ১৯৯২ সালে তার মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সিবিআই কয়েকবার কুয়াতারোচ্চিকে ভারতে আনার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় মালয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা।

সেপ্টেম্বর, ২০০৯: কুয়াতারোচ্চির বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করার কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্ত জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টে।

জানুয়ারি, ২০১১: ভারতের আয়কর দফতরের আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে জানানো হয়, হাউইৎজার কামান বেচাকেনায় ৪১ কোটি টাকা ঘুষ পেয়েছিলেন ওত্তাভিও কুয়াতারোচ্চি এবং উইন চাড্ডা।

২০১২: আবারো বোফর্সের গোলার শব্দে জেগে উঠে ভারতের কংগ্রেসবিরোধী মহল। বিজেপি বলে, যেভাবে কুয়াতারোচ্চিকে দেশের বাইরে ‘সেফ প্যাসেজ’ দেয়া হয়েছিল, তাতেই সরকারের অবস্থান পরিষ্কার ছিল। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধজয়ে কার্যকর ভূমিকা নেয় বোফর্স কামান। কিন্তু বোফর্স কামানের দুর্ভাগ্য যে, যুদ্ধক্ষেত্রে তার গুরুত্ব বরাবরই চাপা পড়ে তা আঘাত হেনেছে রাজনীতির মাঠে।

lockheed-scandal

লকহীড কেলেঙ্কারি

বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য কেলেঙ্কারি যা তৎকালীন সংবাদপত্রগুলোতে ‘লকহীড কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে স্থান পেয়েছিল। ১৯৮৩ সালে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর লকহীড কেলেঙ্কারিতে জড়িত জাপান, হল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি, ইতালিসহ বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশ। লকহীড একটি মার্কিন বিমান কোম্পানি, যা মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে এর বিমান জাপান, হল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন মন্ত্রী, রাজপুত্র ও প্রথম শ্রেণির রাজনীতিবিদদের বশে আনার জন্য বিক্রয়ের চেষ্টা চালায়।

মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণকারীদের মধ্যে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকা, হল্যান্ডের রানী জুলিয়ানার স্বামী প্রিন্স বার্নহার্ড, পশ্চিম জার্মানির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রাঞ্জ যোসেফ স্ট্রস, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুইসি গুইয়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লকহীড কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত প্রতিটি দেশে যে তদন্ত চলে তাতে জাপান ও হল্যান্ড সর্বাধিক আলোচিত হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকাসহ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।

হল্যান্ডের রানী জুলিয়ানার সিংহাসন নিয়ে টানাটানির অবস্থা শুরু হয়। ফলে জুলিয়ানার স্বামী বার্নহার্ডকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। জাপান সরকার তানাকাকে চার বছরের জেল ও ২০ লাখ ডলার জরিমানা করে। সমগ্র বিশ্বের শিক্ষিত জনসমাজের কাছে লকহীড সর্বাপেক্ষা নিন্দিত কেলেঙ্কারি।

সম্পাদনা: সজিব ঘোষ


সর্বশেষ

আরও খবর

বরিশালে নির্মিত হচ্ছে এনএসআই কার্যালয়

বরিশালে নির্মিত হচ্ছে এনএসআই কার্যালয়


বাকেরগঞ্জ উপজেলার ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

বাকেরগঞ্জ উপজেলার ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা


বাস দূর্ঘটনায় থাইল্যান্ডে ১৪ জনের মৃত্যু

বাস দূর্ঘটনায় থাইল্যান্ডে ১৪ জনের মৃত্যু


বৈধ-অবৈধ প্রার্থীর সংখ্যা জানাল ইসি

বৈধ-অবৈধ প্রার্থীর সংখ্যা জানাল ইসি


সাকিবের বছরে আয় ৫ কোটি, ঋণ ৩১ কোটি ৯৮ লাখ

সাকিবের বছরে আয় ৫ কোটি, ঋণ ৩১ কোটি ৯৮ লাখ


মস্কো বিমানবন্দরে ৭০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল

মস্কো বিমানবন্দরে ৭০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল


সৌদিআরব থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল মহেশখালীতে খালাস

সৌদিআরব থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল মহেশখালীতে খালাস


নভেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২১ শতাংশ বেড়েছে

নভেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২১ শতাংশ বেড়েছে


কক্সবাজার সৈকত থেকে দুইজনের লাশ উদ্ধার

কক্সবাজার সৈকত থেকে দুইজনের লাশ উদ্ধার


আইফেল টাওয়ারের কাছে ছুরিকাঘাতে জার্মান পর্যটক নিহত

আইফেল টাওয়ারের কাছে ছুরিকাঘাতে জার্মান পর্যটক নিহত