
সৈয়দ ইফতেখার আলম, মুন্সিগঞ্জ: ‘নদীরে ও নদীরে তুই একটু দয়া কর… ভাঙ্গিস না আর বাপের ভিটা, বসত বাড়ি ঘর…’। প্রমত্তা পদ্মার সঙ্গে গানের লাইনগুলোর করুণ এক মিল। একদিকে পদ্মা ভাঙে তো আরেকদিকে গড়ে। নদী ভাঙন জর্জরিত উত্তাল পদ্মায় কাজ করাটা দুরূহ। আর সেই দুরূহ কাজটাই করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। তিলে তিলে গড়ে উঠছে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মাসেতু। যা অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে কোটি বাঙালির স্বপ্নসারথি।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে যে প্রক্রিয়ায় কাজ এগোচ্ছে তাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না বলে মত- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলীর। তবে তিনি এও মানছেন, কাজে নানামাত্রিক জটিলতা আছে।
প্রথমত জটিলতা, নদীর ড্রেজিং নিয়ে। এরপর নদী শাসন। তৃতীয় জটিলতা আবহাওয়া ও নদীর উত্তাল স্রোত, গভীরতা এবং গতিপ্রবাহ। চতুর্থ জটিলতায় পড়ে বিশাল আয়তনের পদ্মার দুই অংশকে এক সুতোয় বাঁধার প্রক্রিয়া; যার পুরোটাই টেকনিক্যাল।
সেতু নির্মাণে লাগছে ৪২টি পিলার বা খুঁটি। পাঁচটির কাজ এরই মধ্যে শেষ। সবগুলো পিলারে বসবে ২৪০টি পাইল। ইতোমধ্যে ১১৭টি পাইল নদী গর্ভে ঢুকেছে। আরও ১১টি পাইল নিয়ে কাজ করছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, একেকটি পিলারে ছয়টি করে পাইল সাজানো হয়। বর্তমানে তিনটি হ্যামার নিয়ে কাজ করায় প্রতি দুইদিনে একটি করে পিলার বা খুঁটি বাসানো সম্ভব হচ্ছে।
এবার আসা যাক স্প্যানের পালায়। ছয় কিলোমিটারের বেশি লম্বা পদ্মাসেতুতে বসবে মোট ৪১টি স্প্যান। পানি থেকে ১২০ ফুটের বেশি উচ্চতায় যা বসছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে তিনটি স্প্যান। সবশেষ স্প্যান বসলো গত রোববার-১১ মার্চ। এই তিনটি স্প্যানই বসেছে নদীর জাজিরা (শরীয়তপুর) অংশে। ফলে এখনও বাকি আরও ৩৮টি স্প্যান বসানোর কাজ। মাওয়ার (মুন্সীগঞ্জ) ডকইয়ার্ডে ১০টি স্প্যান নিয়ে কাজ চলছে। চীন থেকে আনা ছোট ছোট খণ্ড একত্রিত করে যেগুলোকে বড় স্প্যানে রূপ দেওয়া হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে ঢুকানো হবে নদীর তলদেশে।
স্বপ্নের সেতু দিয়ে কেবল যানবাহন চলবে- তা-ই নয়। চলবে দ্রুতযান ট্রেনও। পদ্মাসেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলে শুরু হবে প্রথমবারের মতো রেলযাত্রা। যা আগে কখনও দেখেনি দক্ষিণবাসী। ১৩ মিটার উচ্চতার স্প্যান; যার নিচ দিয়ে ট্রেন আর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। এছাড়া তিন হাজার ৭৫টি স্ল্যাব বসে ২২ মিটার প্রস্থের চারলেন সড়ক হবে।
প্রকৌশলীরা বলছেন, কাজের ক্ষেত্রে মাওয়া প্রান্তেই বেশি সমস্যা হচ্ছে। সেখানে স্রোত বেশি বসন্ত মৌসুমেই। যখন বর্ষা আসবে তখন সেখানে কোনো কাজই করা সম্ভব হবে না। ফলে এবছরের বর্ষা ভোগাবে অনেক। বর্ষার ভোগান্তি জাজিরা অংশেও কর্মচাঞ্চল্য ধীর করে দিতে পারে। তবে এ নিয়ে শঙ্কিত নন, সেতু সংশ্লিষ্টরা। তারা সব প্রতিকূলতা এড়িয়ে কাজ করে যেতে চান।
এদিকে, সম্প্রতি কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতুর কাজে ৫৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
সম্পাদনা: এম কে রায়হান