
ঢাকা: জাতীয় শোক দিবসে এবার জন্মদিন পালন করেননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার এ সিদ্ধান্তের মাঝে অনেকে ‘রাজনৈতিক উদারতা’ দেখলেও, তাদের সাথে একমত নন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বেগম জিয়াকে ‘আরেক খুনী’ বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার (খালেদা জিয়ার) জন্মদিন এই তারিখে (১৫ আগস্ট) নয়; শুধু আমাদের আঘাত দেয়ার জন্য, যেদিনটা আমরা শোকে কাঁদি, বাবা হারিয়েছি, মা হারিয়েছি, ভাই হারিয়েছি, সেই ব্যাথায় যেদিন ব্যাথিত থাকি, সেই দিনই কেক কেটে সেজেগুজে জন্মদিন পালন করতেন। কালকে শুনলাম উনি (জন্মদিন পালন) করবেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কেউ রাজনৈতিকভাবে এটাকে তার উদারতা দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা কি তা আমি জানি। যেহেতু আগস্ট মাসে তার ছেলের জন্মদিন, ১২ আগস্ট। আর ছেলে মারা গেছে। মা হয়ে আর কি করবেন। সে জন্যই পালন হচ্ছে না। এখানে কোনো রাজনৈতিক উদারতা নাই। কেউ যদি এটা মনে করেন, ভুল করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু নেতারা এমনটা দেখানোর চেষ্টা করছেন, বাস্তবে তা না। কোকোর জন্মদিন যেহেতু করতে পারবেন না, কোকো মারা গেছে; তাই নিজেরটাও করবের না। এটা হলো বাস্তব কথা। আর তাছাড়া সে করবে কি। এটাতো তার জন্মদিন না। পাসপোর্টে অন্য তারিখ রয়েছে; বা তার প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জীবনবৃত্তান্তেও অন্য তারিখ রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য আর আমাদেরকে আঘাত করার জন্য সে (খালেদা জিয়া) এই দিনটাকে বেছে নিয়েছিলো, ফূর্তি করার জন্য। ১৫ আগস্টে তার উৎসব করে সে খুনীদেরকে জানিয়ে দেয় যে তাদের সাথে সে আছে। অতএব সে আরেকজন খুনী।’
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেন, ‘৭৫’র ১৫ আগস্টের পর থেকে ২১ বছর এই দেশ শোষিত হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে, নিপীড়িত হয়েছে।’ তিনি ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছেন, সেই দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার সব সময় চেষ্টা করেছে, তিনি আর শেখ রেহানা যাতে দেশে ফিরতে না পারে। তবে জিয়াউর রহমান বহুবার বিদেশে তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। তিনি জিয়াকে ‘খুনী’ আখ্যা দিয়ে তার সাথে দেখা করতে চাননি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার জীবিত পরিজনদের ওপর নিষ্ঠুর মানুষিক অত্যাচার চালানোর কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার পর আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি, রাস্তায় বসে মিলাদ পড়েছিলাম। যতদিন জিয়া রাষ্ট্রপতি ছিলো, আমাকে ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। বিনিময়ে অন্য জায়গায় বাড়ি, গাড়িসহ অনেক কিছু দিতে চেয়েছে, আমি নেইনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩০ জুলাই ১৯৭৫ যখন বাংলাদেশ ছেড়ে যাই, তখন শেখ কামাল, জামাল, রাসেল- সবাই সেদিন তেজগাঁও বিমান বন্দরে ছিলো। যেদিন ফিরে এলাম ১৯৮১ সালের ১৭ মে সেদিন, আমার পরিবারের কেউ ছিলো না। ছিলো লাখ লাখ জনতা। আমি তাদের মাঝেই আমার হারানো বাবা-মা, ভাইকে খুঁজেছি।’
মুজিব কন্যা আরো বলেন, ‘এদেশের মানুষ ভালো থাকলে আব্বার আত্মা শান্তি পাবে।’
প্রতিবেদন: শরীফ খিয়াম, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ