
ঢাকা: ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া বন্য হাতিটিকে সোমবার ভোররাতে ট্রাংকুলাইজার বন্দুক দিয়ে গুলি করতে সক্ষম হলেও সেটিকে উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। হাতিটিকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাতিটি বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকেই তাকে বিরামহীন ভাবে অনুসরণ করে চলেছে উৎসুক জনতা। এই অতি উৎসাহীদের কারণেই বারবার হাতিটিকে উদ্ধারের তৎপরতা ব্যর্থ হচ্ছে বলে কর্মকর্তাদের অভিমত।
প্রায় দেড় মাস ধরে হাতিটিকে অনুসরণ করছেন, এমন একজন সাংবাদিক নানা স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে বলেছেন, কেউই এখন আর হাতিটিকে দেখছে না। বাংলাদেশি উদ্ধারকারী দলের প্রধান অসীম মল্লিক সোমবার ভোররাতে বলেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ির চরাঞ্চলে রোববার রাত দশটা থেকে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছিলেন তারা। এক পর্যায়ে হাতিটি উঁচু স্থানে চলে এলে তাকে ট্রাংকুলাইজার বন্দুক নামে বৃহৎ প্রাণী অজ্ঞান করার বিশেষ বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়।
মল্লিক বলছেন, গুলিটি সম্ভবত লেগেছে, কারণ তার ভাষায় এরপর ‘তার একটু ঝিম আসছিল’। এসময় হাতিটি এলোমেলো ভাবে ঘুরছিল। তারা অপেক্ষা করছিলেন হাতিটি অজ্ঞান হয়ে পড়ার জন্য। কিন্তু মানুষের ভিড়ে এক পর্যায়ে হাতিটি তাদের দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে যায়।
তিনি বলেন, ‘এত জনগণ ছিল এখানে এই জনগণের কারণে সে আবার একদিকে হারিয়ে গেছে। এরপর আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। অভিযান চলছে, হাতি খুঁজছি আমরা। পাওয়া গেলে আবার চেষ্টা করব।’ তিনি বলছিলেন, দিনের বেলা মানুষের ভিড়ের চাপে হাতি উদ্ধারের চেষ্টা ব্যহত হচ্ছিল। তাই তারা রাতে উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু রাতেও প্রচুর উৎসুক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
মল্লিক বলেন, ‘এত পরিমাণ লাইট নিয়ে আসছে, মহিলা মানুষ, বাচ্চাকাচ্চারাও ছিল রাস্তায়।’ এদিকে, সাংবাদিক আজিজুর রহমান চৌধুরী বলছেন, অসীম মল্লিক তাকে সকালবেলা জানিয়েছেন যে হাতিটি নান্দিনা এলাকায় আছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। কিন্তু নান্দিনার বহু মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেউই হাতিটিকে দেখেনি।
হাতিটির হয়ত মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আজিজুর রহমান চৌধুরী বলছেন, ‘এলাকাটি এখন বন্যাপ্রবণ। যদি সত্যিই হাতির গায়ে ট্রাংকুলাইজারের গুলি লেগে থাকে আর তারপর সে অজ্ঞান হয়ে পানিতে ভেসে যায়, তাহলেতো আর সে বাঁচবে না।’
তবে উদ্ধারকারী দলের নেতা অসীম মল্লিক বলছেন, ট্রাংকুলাইজারের গুলি লাগার পর এক ঘণ্টা হাতি তাদের দৃষ্টিসীমায় ছিল। এক ঘণ্টা পর আবার সে যখন মুভ করতে শুরু করেছে তখন আর মনে হচ্ছে না যে তার এনেস্থেশিয়া (অবশ করে ফেলার উপাদান) কাজ করেছে।’
নয় দিন ধরে হাতিটিকে উদ্ধারের জন্য অনুসরণ করছে ১৭ সদস্যের বাংলাদেশি উদ্ধারকারী দলটি। পরে ৩ সদস্যের একটি ভারতীয় উদ্ধারকারী দলও তাদের সাথে এসে যোগ দেয়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে রোববারই ফিরে যায়।
আসামে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দলছুট হয়ে ২৭ জুন বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্য হাতিটি। আনুমানিক ৫ টন ওজনের হাতিটি খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে এর আগে জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে প্রবেশের পর উত্তরাঞ্চলীয় নদনদী ও চরাঞ্চল ধরে ক্রমাগত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছিল বন্য হাতিটি। এই সময়কালে সে অন্তত ৫শ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। সূত্র: বিবিসি।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এমএস/এসআই