
ফারহানা করিম, ঢাকা: গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সংসদের বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য জো কক্সকে তার নির্বাচনি এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ৪১ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অর্থাৎ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারী ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা কোন চরমপন্থী। তবে অতীতেও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন নারী রাজনীতিবিদরা। নিহত এসব রাজনীতিবিদের তালিকা দেখে নেয়া যাক।
ইন্দিরা গান্ধী
ইন্দিরা গান্ধী দুইবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন। তিনি দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর একমাত্র সন্তান। ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার নয়াদিল্লির বাসভবনে শিখ দেহরক্ষী দ্বারা নিহত হন। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ধানে শিখদের ধর্মীয় স্থাপনা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সেনা প্রবেশের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
আগাথে উইলিংজিয়িমানা
রুয়ান্ডার গণহত্যা শুরুর দিকে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী আগাথে উইলিংজিয়িমানা ১৯৯৪ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন। এসময় তার নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘ নিযুক্ত বেলজিয়ামের শান্তিরক্ষীবাহিনীর ১০ জন সদস্য ছিলেন।
আন্না লিন্ধ
সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্না লিন্ধ রাজধানী স্টকহোমের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাকাটার সময় ২০০৩ সালে ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ২ সন্তানের এই জননীকে সুইডেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। তার হত্যাকারী মিহাইলো মিহাইলোভিচ একজন সার্বিয়ান অভিবাসীর সন্তান। সে সুইডিশ পত্রিকাকে জানায়, রাজনীতিবিদদের প্রতি ঘৃণার কারণে এই হত্যা করা হয়েছে। মিহাইলোভিচকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আকিলা আল হাশিমি
সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইরাকের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন আকিলা আল হাশিমি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর সাদ্দামের পতন হলে অন্তর্বর্তীকালীন গভর্নিং কাউন্সিলে যোগদানের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২০০৩ সালে বাগদাদে তার বাড়ির সামনে ছয়জন বন্দুকধারী অতর্কিতে গুলি করে তাকে হত্যা করে। সাদ্দামের প্রতি অনুগতরাই তার হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয়।
বেনজির ভুট্টো
পাকিস্তানে দুইবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ বেনজির ভুট্টো। কিন্তু ২০০৭ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি দুবাইয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দুবাই থেকে আসার এক সপ্তাহ পরেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
হানিফা শাফি
আফগানিস্তানের রাজনীতিবিদ হানিফা শাফি ২০১২ সালে তার গাড়িতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। তিনি নারী অধিকার বিষয়ে নেতৃস্থানীয় একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
জারা শহীদ হুসেন
ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ছিলেন জারা শহীদ হুসেন। ২০১৩ সালে করাচিতে নিজ বাসস্থানের বাইরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইসাবেল কুরাসকো
স্পেনের উত্তরাঞ্চলের লেওন প্রদেশের গভর্নর ছিলেন ইসাবেল কুরাসকো। ২০১৪ সালে তার বাড়ির কাছে হাঁটাহাঁটি করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
৬০ বছর বয়সি একজন বৃদ্ধা নারী এবং তার কন্যা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। প্রাদেশিক পরিষদে কন্যার চাকরি চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইসাবেলকে হত্যা করা হয় বলে জানান হত্যাকারী।
সাদো আলি ওয়ারশামি
সোমালিয়ার প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সাদো আলি ওয়ারশামি, যিনি পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদে পরিণত হন। তাকে ২০১৪ সালে একজন ইসলামি জঙ্গি হত্যা করে। আল শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠী পরবর্তীকালে জানায়, জঙ্গি দমনে আফ্রিকান ইউনিয়নের বাহিনীকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়।
গিসেলা মোতা
মেক্সিকোর তেমিক্সকো শহরের মেয়র গিসেলা মোতাকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের আগের দিন তিনি মেয়র হিসেবে প্রথম তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। মেক্সিকোর গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নিজ বাসভবনে চারজন বন্দুকধারীর হামলার শিকার হন তিনি। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফকে/ওয়াইএ