
ঢাকা: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার বন্যা। রান আসবে ঝড়ের গতিতে। ব্যাটসম্যানদের খেলা বললেও ভুল হবে না ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এ ভার্সনকে। অথচ সেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই আজ রংপুরের বোলাররা সাক্ষাৎ ‘যমদূত’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন খুলনা টাইটান্সের সামনে। পাকিস্তানী অলরাউন্ডার ও আরাফাত সানির ঘূর্ণী বলে মাত্র ৪৪ রানে শেষ হয়েছে তাদের ইনিংস। ঘরোয়া ক্রিকেটের জমজমাট এ আসরে (বিপিএল) এটাই সর্বনিন্ম রানের লজ্জার রেকর্ড।
এর আগে, কম রানে ইনিংস গুঁটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড ছিল সিলেট রয়্যালসের। আর ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সর্বনিন্ম রানের রেকর্ডটি ভারতের অঙ্গরাজ্য দল ত্রিপুরার। সৈয়দ মোস্তাক আলী ট্রফিতে ঝাড়খন্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৩০ রানে গুঁটিয়ে গিয়েছিল দলটি।
৪৫ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে জয় পেতে কোনো বেগই পেতে হয়নি নাঈম ইসলামের দলকে। যে উইকেটে রান তুলতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন খুলনার ব্যাটসম্যানরা, সেই উইকেটেই রংপুরের ব্যাটম্যানরা স্বাচ্ছন্দে খেলে ৭২ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন। চলতি এ আসরে রংপুরের টানা দ্বিতীয় জয় এটি। নিজেদের প্রথম ম্যাচেও ৯ উইকেটের বড় জয় পেয়েছিল তারা।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারতে হারতে রাজশাহীর বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল খুলনা টাইটান্স। আজ মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া এ ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই চাপের মুখে পড়ে যায় খুলনার ব্যাটসম্যানরা। রংপুরের বোলারদের সামনে এক মুহুর্তের জন্যও তারা দাঁড়াতে পারেনি। দলের প্রতিটি বিভাগের ব্যাটসম্যানরা অসহায় আত্মসমর্পন করেছেন। পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদী ও আরাফাত সানির ঘূর্ণী বলেই ধ্বংস হয়ে যায় খুলনার ইনিংস। দলের চার ব্যাটসম্যান শূণ্য রানেই ফিরেছেন সাজঘরে। আর পাঁচ ব্যাটসম্যান নিজেদের স্কোরটাকে দুই অঙ্কের ঘরেও নিতে পারেননি। যে রান করেছেন, তা সারিবদ্ধভাবে রাখলে যে কেউ সেলফোন নম্বর ভেবে ভুল করবেন। একমাত্র শুভাগত হোম নিজের ব্যক্তিগত ইনিংসটাকে ১২ রান পর্যন্ত নিতে পেরেছিলেন। সেটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
খুলনার ইনিংসে প্রথম আঘাতটা হানেন স্পিনার সোহাগ গাজী। ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই নিকোলাস পুরানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। পরের আঘাতটাও গাজীর। এবার অবশ্য আরেক ওপেনার আব্দুল মজীদকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন তিনি। সেই শুরু, আর উইকেটে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি খুলনার ব্যাটসম্যানরা। খুলনার অধিনায়ক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে ২ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে প্যাভিলিয়নে ফেরান রিচার্ড গ্লেসন।
এরপর শুরু পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির ঘূর্ণি ঝড়। তার স্পিনের ‘নীলবিষে’ ধ্বংস হয়ে যায় খুলনার ইনিংস। বল করতে এসেই পর পর দুই বলে তুলে নেন অলক কাপালি আর রিকি ওয়েসেলসের উইকেট। পরের ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলে ফিরিয়ে দেন নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য সদ্য ঘোষিত প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পাওয়া শুভাগত হোমকে।
৩১ রানেই টপ অর্ডারের ৬ উইকেটের পতন ঘটার পর খুলনা ভাগ্যে যে কি অপেক্ষা করছে, সেটা অনুমেয়ই ছিল। কিন্তু এতোটা যে বাজে দিন কাটাতে হবে, সেটা হয়তো কারো কল্পনাতেই ছিল না। শেষ চার ব্যাটম্যান টেনেটুনে স্কোর বোর্ডে জমা করেন মাত্র ১৩ রান। আফ্রিদী ঝড়ের পর শেষ দিকে খুলনার ইনিংসে পঁচন ধরান আরেক স্পিনার আরাফাত সানি। তিনি ২.৪ ওভার বল করে কোন রান না দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন। আর শহিদ আফ্রিদী ১২ রানের খরচায় পেয়েছেন ৪ উইকেট।
মাঠে নেমে প্রথম ওভারেই দু’টি বাউন্ডারি হাঁকান রংপুরের ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ। তৃতীয় ওভারে এসে আরও একটি চারের মার মেরে নামের পাশে ১৩ রান জমা করেই জুনায়েদ খানের শিকারে পরিনত হন প্রথম ম্যাচে ৮০ রানের ইনিংস খেলা শেহজাদ। দ্বিতীয় উইকেট জুঁটিতে মিথুন আলীকে সাথে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় জয়ের বন্দরে তরী ভেড়ান সৌম্য সরকার। মিথুন ১৫ আর সৌম্য ১৩ রান করেন।
প্রতিবেদন: কবীরুল ইসলাম, সম্পাদনা: ইয়াসিন