
লাহোর: পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবরই সাধারণত গণমাধ্যমে ওঠে আসে। কিন্তু দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি খবর সম্প্রতি বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর কেড়েছে।
পাঞ্জাবের গোজরা শহরের একটি গ্রামে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান প্রতিবেশিদের জন্য মুসলমানরা গির্জা তৈরি করে দিচ্ছেন। ইস্টার (খ্রিষ্টীয় ধর্মীয় উৎসব) এর কিছুদিন আগে অর্থাৎ গত মার্চে গ্রামের কয়েকজন মুসলিম এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্থানীয় যাজক ফাদার আফতাব জেমস তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানান, গ্রামে স্বল্প সংখ্যক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বাস। মাত্র ২০টি পরিবার এখানে বাস করে। অথচ তাদের প্রার্থনা করার কোন স্থান নেই। খ্রিষ্টানদের পবিত্র দিনগুলিতে কারও বাড়িতে কিংবা উন্মুক্ত স্থানে প্রার্থনা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এই বছর ইস্টারের আগে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা গির্জা বানানোর উদ্যোগ নেন। তারা এটিকে ইস্টারের উপহার হিসেবে আমাদের দেয়ার প্রস্তাব করেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের জন্য গর্ববোধ করি।’
বর্তমানে গ্রামের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অধীর আগ্রহে গির্জা নির্মাণ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
খ্রিষ্টান শ্রমিক ফারইয়াদ মসিহ বলেন, ‘আগে আমরা কোন ভাড়া বাড়িতে প্রার্থনার জন্য সমবেত হতাম। কিন্তু শিগগিরই আমরা নতুন একটি গির্জা পাবো। অবশেষে আমাদের সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।’
খ্রিষ্টানরা পাকিস্তানের বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। দেশটির মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩ ভাগ খ্রিষ্টান। এই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষই পাঞ্জাবে বাস করেন।
বর্তমানে গির্জার জন্য গ্রামবাসী প্রায় দেড় লাখ পাকিস্তানি রুপি সংগ্রহ করেছে। সেইসঙ্গে গির্জা নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে।
গির্জার তহবিল সংগ্রাহকদের একজন মিয়া ইজাজ বলেন, ‘গ্রামে ৪টি মসজিদ রয়েছে অথচ খ্রিষ্টানদের কোন গির্জা নেই। তারা দরিদ্র মানুষ। তাদের গির্জা বানানোর মত অর্থও নেই । তাই আমরা গির্জা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’
২০০৯ সালে গোজরায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর ধর্মীয় হামলার ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের চার্চ ও ঘরবাড়ি। ওই হামলায় ১০জন নিহতও হন। এই গ্রামের মানুষেরা সেই সহিংস ঘটনা ভুলেনি। কিন্তু তারা দেখিয়ে দিতে চান, ব্যক্তিগত ভালোবাসা সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে হারিয়ে দিতে পারে।
ইজাজ বলেন, ‘আমরা বিশ্বকে বলতে চাই, পাকিস্তান চরমপন্থীদের দেশ নয়। এদেশে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষই কেবল চরমপন্থী। এছাড়া এখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সম্প্রীতি বিরাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলিম শরণার্থীদের জন্য যা করছে, মুসলিম হিসেবে তার প্রতিদানে আমাদেরও কিছু করা উচিত।’
সূত্র: বিবিসি, আনাদোলু এজেন্সি
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফকে