
ঢাকা: সরকারের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে এমন মন্তব্য করে দেশের খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে অভয় দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। জবাবে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নেতারাও জানিয়েছেন, এ ধরনের গুপ্তহতায় তারা আতঙ্কিত নয়, তারা জানেন কী কারণে এবং কারা এসব ঘটাচ্ছে। তবে দুয়েকজন নেতা অবশ্য গুপ্তহত্যায় উদ্বেগ এবং সরকারি দলের নেতাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল রোজারিও বলেন, ‘গুপ্তহত্যা কেন হচ্ছে আমরা নিজেরাও এটি উপলব্ধি করতে পারি। সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল এগুলো করছে। ২০০১ সাল থেকে তারা এটি শুরু করেছে এবং ২০১৩ সালে তারা মরণকামড় দেয়। ইতোমধ্যে আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চার জনকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো খুবই সুপরিকল্পিত হত্যাকণ্ড। তাই সাধারণভাবে চিন্তু না করে এদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা উদ্বিগ্ন তবে আশা করি জনপ্রতিরোধের মাধ্যমে এদের দমন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেনশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া বলেন, ‘দেশি বিদেশি আন্তর্জাতিক চক্র ধর্মের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য টার্গেট কিলিং শুরু করেছে। আমরা আতঙ্কিত। এগুলো বন্ধে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা দরকার।’
বাংলাদেশ ব্যাপিস্ট চার্চ সংঘের সহ সভাপতি উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বলেন, ‘মাত্র ৫০-৫২জনকে খুন করে আমাদের আস্থায় চিড় ধরানো যাবে না। আমরা জানি বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের খুন করা হচ্ছে আর্ন্তজাতিক পর্যায়কে জানানোর জন্য।’
তিনি বলেন, ‘কারণ একজন বৌদ্ধ খুন হলে বৌদ্ধ প্রধান এবং খ্রিস্টান কেউ খুন হলে খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খারাপ হবে এজন্য এগুলো করা হচ্ছে। তবে আমরা সবগুলো দূতাবাসে গিয়ে জানিয়েছি, এগুলো কারা করছে, এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে। আমরা বিদেশি দূতাবাসগুলোকে এটাও বলেছি যে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই আমরা সবচেয়ে নিরাপদ। তাই গুপ্তহত্যায় আমরা মোটেও ভীত নই।’
বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূত বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমরা তাকে বলেছি এই দেশে ধর্মের স্বাধীনতা সবচেয়ে নিরাপদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে। বিপ্লব প্রস্তাব রাখেন, বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা এবং কুমিল্লা এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বেশি বসবাস করেন। এই দুই এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে যদি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয় তাহলে বৌদ্ধরা আরো ভালোভাবে বসবাস করতে পারবে।
বৌদ্ধ ফেডারেশনের আরেকজন নেতা পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করেন। সম্প্রতি পুলিশ দুই বৌদ্ধ ছেলেকে আটক করে ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জবাবে সভার সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনি সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবো। খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা অভিযোগ করেন, নাটোরের বড়াইগ্রামে খ্রিস্টান পাদ্রী খুন হওয়ার ৭ দিন পার হলে গেলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেখানে যাননি। জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের ১৪ দলের টিম সেখানে গেছে। স্থানীয় এমপি হয়তো ব্যস্ত ছিলেন।
সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার জন্য নানা ষড়ডন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় প্রলোভন আসছে। কিন্তু আমরা কোনো দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে যেতে চাই না। এ দেশের নাগরিক হিসেবেই থাকতে চাই।
সভাপতির বক্তব্য ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সর্বক্ষেত্রে হেরে গিয়ে বিশ্বের সামনে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলতেই একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বেছে বেছে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। একাত্তরের ঘাতকদের বিচার যারা চায়নি তারাই এসব করছে। তাদের গ্রেফতার শুরু হয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সকল ষড়যন্ত্র শেষ করে দেয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শরিফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়জেদুল ইসলাম ও নজিবুর বশর মাইজভান্ডারি।
উপস্থিত ছিলেন আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন নাহার লাইলী, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, আমিনুল ইসলাম আমিন ও এস এম কামাল হোসেন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এস/জাই