
প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটের ব্যবসায়িদের সাথে স্থানীয় হকারদের দফায় দফায় সংঘর্ষের নেপথ্যের দুই পক্ষই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক। এখানে ব্যবসায়িদের নেতৃত্বে আছেন কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন। আর হকারদের নেতৃত্বে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাদাৎ খান আতিক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনু। নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
মো: রনি, শহীদুল ইসলামসহ আরো একাধিক হকার নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে জানান, কিশোরগঞ্জ-৫(বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন ১২ বছরের বেশী সময় ধরে ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটের ব্যবসায়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। মার্কেটের সব ব্যবসায়ি তার কথা মতো চলে।পুরো মার্কেটকে তিনি ফুটপাত বানিয়ে ফেলেছেন। ভেতরে চায়ের দোকান, খলিফার দোকান পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। ভেতরে চলাফেরারও কোনো জায়গা নেই।
হকারদের বক্তব্য, ‘এক যুগ ধরে এই মার্কেটে কোন নির্বাচন হয়না। আওয়ামী লীগের কাছে যেমন এখন কোন বিরোধী দল নাই, তেমনি এই মার্কেটেও কোনো বিরোধী দল নাই। এমপি (আফজাল) নিজেই সব। একাই বসে বসে খাচ্ছেন। মার্কেটের সংস্কারও করান না। বিল্ডিং থেকে সারাদিন পানি পড়তে থাকে। সামনের রাস্তায় মানুষ হাঁটতেও পারে না।’ তারা দাবি করেছেন, মার্কেটের ব্যবসায়িদের সাথে তাদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণও এমপি আফজাল। তার নির্দেশেই হকারদের উচ্ছেদের ঘোষণা দেন ব্যবসায়িরা। মার্কেটের মাইক থেকেই এমন ঘোষণা আসে।
তবে এই অভিযোগ অস্বিকার করেছেন আফজাল হোসেন। নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সরকার, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন এখানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল। আমাদের মার্কেটের লোকজন বৃহস্পতিবার তাদের গিয়ে বলে পুলিশ যেহেতু তোমাদের এসে উঠিয়ে দিয়ে গেছে, তোমরা আর এখানে বসতে পারবেনা। তখন তারা বলে, না – আমরা বসবো। আমরা বলি, তাহলে চেপে বসো। পথচারীদের যাতে কোন সমস্যা না হয় আর মার্কেটের প্রবেশ পথেও যাতে কোনো বাঁধা সৃষ্টি না হয়। তারা এটাও মানতে নারাজ। তখন এক দুই কথায় ব্যবসায়িদের সাথে তাদের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দুই পক্ষের সাথে আমি মিডিয়া হয়ে রাত নয়টা পর্যন্ত বৈঠক করি। সব কিছু যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পরদিন শুক্রবার আবারও বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু পরদিন সকালেই হকাররা গায়ের জোড় দেখিয়ে মার্কেট বন্ধের চেষ্টা করে। তখন মার্কেটের ব্যবসায়িরাও উত্তেজিত হয়ে মার্কেটের গেট খোলার চেষ্টা করে। দুই পক্ষে ফের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।’
আবু সাঈদ, খোরশেদ, অলি, রাহাত নামের কয়েকজন হকারকে এই অরাজকতার জন্য দায়ি করেন আফজাল। এদের খুঁটির জোর কোথায়? – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘আমি তো জাতীয় সংসদের একজন সদস্য। তাই চাইলেও সব কথা আসলে বলা যায়না। আমি যদি শুধু ব্যবসায়ী হতাম, বা মার্কেট কমিটির সাধারন সম্পাদক হতাম, তাহলে আপনাদের সব বিষয়ে জানাতে পারতাম। যেহেতু আমি সরকারি দলের এমপি, চাইলেও সব কথা বলতে পারিনা।’
এর আগে স্থানীয় হকার মো. শহীদুল ইসলাম নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের যারা রাজনীতি করে এদের বেশিরভাগই হকার। শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাদাৎ খান আতিক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনু আমাদের নেতা।’
উল্লেখিত সংঘর্ষের ব্যাপারে হকাররা বলছেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের আগে থেকেই জানানো হয়েছিলো ডিএমপি (ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ) কমিশনার ফুটপাত পরিদর্শনে আসবেন। তাই আমরা সেদিন দোকান খুলে বসিনি। এতে মার্কেট কমিটি মনে করেছে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়ে গেছে। এখন শক্তি প্রয়োগ করলেই তারা সবাই চলে যাবে। তাই মার্কেটের লোকজন এসে হঠাৎ করেই ফুটপাত ভাংচুর শুরু করে।’
তারা আরো বলেছেন, ‘মার্কেটের এক হাজার চারশ দোকান। প্রতিটি দোকানে তিন চারজন করে লোক। সবাই এসে একযোগে হামলা চালায়। এর আগে মার্কেটের মাইকে হকার উচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হয় । সবাই মিলে আমাদের দোকান ভাংচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে আমরা পল্টন থানায় গিয়ে মামলা করি এবং মার্কেট বন্ধ রাখার আহবান জানাই। কিন্তু পরদিন তারা মার্কেট খুলতে গেলে আবার তাদের সাথে আমাদের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশের ডিসি (ডেপুটি কমিশনার)’র মাথা ফেটে গেলে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিচার্জ করে এলাকা ফাঁকা করে। পরে ডিএমপি কমিশনার মার্কেট বন্ধ রাখতে বলেন। পরে আমাদের নেতাদের সাথে আলতাফ এমপি’র সমঝোতা বৈঠক হয়।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এসকে