
নীলিমা দোলা, টুঙ্গিপাড়া: বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ, বাংলার মানুষ তথা পুরো বাংলা চিরঋণী যে মহামানবের কাছে, তিনি আর কেউ নন; বাঙ্গালী জাতির পথপ্রদর্শক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’। ১৫ই আগস্ট মহান এই নেতার শাহাদাৎবার্ষিকী। তাকে স্মরণ করেই আমরা নিউজনেক্সটবিডি ডটকম সম্প্রতি ঘুরে এসেছি টুঙ্গিপাড়ায়।
তার কবরের পাশে দাড়াতেই প্রথম যে কথাটি মনে হয়েছিলো,
‘আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো’
একে বেঁকে চলা, মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে পাটগাতি ইউনিয়ন। তার ঠিক পরেই টুঙ্গিপাড়া। প্রকৃতির অপার দানে, এ যেনো এক পুণ্যভূমি। লাল ইটের দেয়ালে ঘিরে আছে পুরো মাজার। ঢোকার মুখেই লেখা, ‘দাঁড়াও পথিক বর যথার্থ বাঙালি যদি তুমি হও। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে। এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা’।
ঢুকতেই হাতের ডানে একটি ষ্টেশনারী দোকান। বাঁ দিকে আছে দর্শনার্থীদের জন্য বসবার আর বিশ্রামের জায়গা। সামনে আগাতেই প্রদর্শনী কেন্দ্র আর লাইব্রেরী। সেই স্থাপত্য নিদর্শণ যে কারো মন কাড়বে। স্থপতি ভীষণ ভালোবেসেই নিশ্চয়ই কাজটা করেছিলেন। লাইব্রেরী আছে দ্বিতল ভবনের নিচতলায়। ছোট্ট আর ছিমছাম গোছানো একটা লাইব্রেরী। রয়েছে নানান রকমের বইয়ের সংগ্রহ। দোতলায় রয়েছে মূল সংগ্রহশালা।
বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের নানান স্মৃতির ছবি রয়েছে সেখানে। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির সাথে বসে কথা বলছেন আর ইন্দিরা গান্ধীর সাথে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছেন। এই দুটো ছবি যে কারো নজরকাড়ে। এই দুটো ছবিই বলে দেয়, কি ভীষণ সম্প্রীতি ছিলো এই মানুষের অন্তরে। সংগ্রহশালার একদম সামনেই রয়েছে রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিচ্ছেন, সেই বিখ্যাত ছবিটি। তার সামনেই দেখা গেলো অনেক দর্শনার্থীকে। সংগ্রহশালা ভেতরে রয়েছে সেই কফিনটি, যাতে করেই নিয়ে আসা হয়েছিলো জাতির পিতার নিথর দেহ।
সংগ্রহশালা থেকে বের হয়ে নীচেই মুক্তমঞ্চ। যেখানে সেমিনার বা সভা হয়ে থাকে। লাইব্রেরীর পাশেই চমৎকার মসজিদ। মসজিদের কিনারা ঘেঁষে শান বাধানো বিশাল পুকুর। পুকুরের পাড়জুড়ে নানান গাছ, পাখির কলতান। পুকুরের সামনের রাস্তাটা চলে গেছে সমাধি পর্যন্ত। এরপরেই সমাধিস্থল। সাদা-কালো টাইলসে বাধাই করা। প্রথমেই রয়েছে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আর লুতফুর রহমান মুজিবের কবর। তার ঠিক পাশেই ঘুমুচ্ছেন সেই মহামানব। যেন বাবা-মায়ের ছায়ায় খুব শান্তির সে ঘুম। সে কবর থেকে ভেসে আসছে অসংখ্য কথা, স্মৃতি আর কান্নার দাগ।
তার পাশে দাড়িয়ে অনায়াসেই বলে ফেলা যায়, ‘আমরা ভালো নেই, এই অস্থির সময়ে আপনাকে বড্ড প্রয়োজন ছিলো!’ পাশেই একটা কৃত্রিম ঝর্না। ঝর্নার গায়েই লেখা সেই অমরবাণী-
‘যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরী, মেঘনা বহমান,
ততোদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান।’
সমাধির সামনেই তিনতলা সেই বাড়িটি। এটিই তার পৈতৃক বাড়ি। সাধারণত সেখানে কেউ থাকেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী এলে এখানেই থাকেন। পিতার স্মৃতিতে, সমাধিতে হাজারো জমানো কথা রেখে, আমরা ফিরলাম অবশেষে।
যেভাবে যেতে পারবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার বাস পাওয়া যায়। আর ভেঙ্গে যেতে চাইলে, মাওয়া হয়ে যেতে পারবেন। পথে পাটগাতি নেমে খেয়ে নিতে পারেন। তাছাড়াও সমাধির আশেপাশেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। আর দর্শনার্থীদের জন্য ওখানকার মানুষ খুবই সদয়। রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকা্রী বাহিনীর সদস্যরাও। যেকোন প্রয়োজনে সাহায্য পাবেন তাদের কাছ থেকেই। ফেরার পথে গোপালগঞ্জ শহরেও ঢু মারতে পারেন। শহরের দত্তের মিষ্টি দারুণ। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ শৈলীতেও চোখ জুড়াবে।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসএনডি/টিএস