
ঢাকা: জল-জঙ্গল আর জনপদের অপূর্ব সম্মিলন এই বাংলাদেশ। বিপুল প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে সমুদ্র, সমতল আর সবুজাভ পাহাড়ে ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপ। দেশের সেরা দ্বীপগুলোর মধ্যে সেন্টমার্টিন অন্যতম। এখানে বছরজুড়ে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে আসা বহু পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মানুষের জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই দেশের অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে আলাদা। তাই এই গরমে পরিবারসহ ঘুরে আসা যায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। তার আগে জেনে নেয়া যাক সেন্ট মার্টিন দ্বীপের খুটিনাটি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এখানে প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে।
সেন্ট মার্টিনের প্রাচীন নাম ছিল জাজিরা। স্থানীয় লোকদের মতে, আরব বণিকেরা দিয়েছিল এই নাম। পরবর্তীকালে জাজিরা স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে খ্যাত হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে ইংরেজরা একে সেন্টমার্টিন নামে অভিহিত করে বলে জানা যায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। এ দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা, যা জোয়ারে তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। ভাটার সময় এই দ্বীপের আয়তন ১০-১৫ বর্গকিলোমিটার।
দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। এর প্রস্ত কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পেজালা (অ্যালগি) নামে পরিচিত একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্ট মার্টিনে প্রচুর পাওয়া যায়। এগুলো বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে তবে লাল পেজালা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয়।
এ ছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল কোরাল, রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ক্কু মাছ ইত্যাদি।
দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেই। তবে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় আছে। দক্ষিণ দিকে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ আছে। অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কেওড়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন ইত্যাদি।
প্রায় শত বছর আগে এখানে লোকবসতি শুরু হয়। বর্তমানে এখানে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। দ্বীপের লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা মাছ ধরা। পর্যটক ও হোটেল ব্যবসায়ীরাই প্রধানত তাদের কাছ থেকে মাছ কেনেন। দ্বীপবাসী অনেকে মাছ, নারিকেল, পেজালা এবং ঝিনুক ব্যবসা করে। এ ছাড়াও কিছু মানুষ দোকানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। ছোট ছোট শিশুরা দ্বীপ থেকে সংগৃহীত শৈবাল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রচুর নারিকেল এবং ডাব বিক্রি হয়। মিয়ানমারের আরাকন থেকে বাংলাভাষী রোহিঙ্গাদের দ্বীপ অঞ্চলে প্রায়শই দেখা যায়। প্রতি বছর বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। তারা সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপলব্ধি করে। কোনো কোনো পর্যটক ধারণা করেন, সেন্ট মার্টিন বিশ্বের সেরা দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে করে কক্সবাজার যেতে হবে। কক্সবাজার থেকে ট্রলার কিংবা জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যেতে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানেও কক্সবাজার যাওয়া যাবে। কক্সবাজার শহরের যে কোনো হোটেলে রাতযাপন করা যাবে। এছাড়া সেন্ট মার্টিনেও বেশ কয়েকটি ভাল হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য।
নিউজনেক্সটবিডি ডটককম/টিএস