
শরীফ খিয়াম , ঢাকা,
ঢাকা: চীন-ভারতের বৈরীতায় দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামি জঙ্গিদের নতুন করে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ। তাঁর ধারনা, বৃহৎ ওই দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনায় যে নতুন ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরী হয়েছে, তারই প্রভাব পড়েছে এই অঞ্চলের জঙ্গিবাদে।
সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আইএসপন্থী (ইসলামিক স্টেট) নব্য জেএমবি ও আল কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন হামলার প্রস্তুতিকালে আটক হয়েছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠির সাথে অর্থ লেনদেনের অভিযোগেও আটক হয়ে জঙ্গি নেতা।
এমনকী ভারতেও গ্রেপ্তার হচ্ছে বাংলাদেশি জঙ্গি। ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থার (এনআইএ) আল কায়দা ও আইএস সম্পর্কে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসছে।

এরই মধ্যে দেশটির সংবাদমাধ্যম জি নিউজের সন্ত্রাসবাদ এবং অপরাধ বিষয়ক সংবাদদাতা পূজা মেহতা টুইট বার্তায় জানান, আইএস বা আইসিসপন্থ একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের নতুন আমীরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, নাম আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি।
এ নিয়ে আলাপকালে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ নিউজনেক্সটবিডিকে বলেন, “ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের কারণেই জঙ্গিবাদকে পুনরায় ব্যবহার করার একটা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দেশি–বিদেশী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। তারা জঙ্গিদের পুনরায় সংগঠিত করা চেষ্টা করছে।”
এরই অংশ হিসেবে আইএস-এর আমির ঘোষণা, নিজেকে ইমাম মেহেদি (শেষ যমানার খলিফা) দাবি বা আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে আর্থিক লেনদেনের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে আমাদের পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট বাঁধার তৈরী করতে পারছে। গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে বর্তমানে এদেশে জঙ্গিরা গোপনে সংগঠিত হওয়ার সুযোগটা কম পাচ্ছে, নড়াচরা করলেই ধরা পড়ছে।”
তবে চীন-ভারতের বৈরীতার মধ্যে বাংলাদেশকেও পরোক্ষভাবে টানাটানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। চীনের নেতাদের সাথে পাকিস্তানের জঙ্গিদের যোগসাজশের খবর বেড়িয়েছে গণমাধ্যমে। এই উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে, তারা নতুন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে এগিয়ে থাকতে জঙ্গিশক্তিকেও ব্যবহার করতে চাচ্ছে।”
চীনের এমন আচরণে এই অঞ্চলের জঙ্গিদের নতুন করে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে বলেও জানান গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের এই নির্বাহী পরিচালক।
“করোনা পরিস্থিতির পরে বিশ্বে একটা নতুন উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে তদারকী ছিল তা এ সময়ে কিছুটা খর্ব হয়েছে। কারণ ‘ফোকাস শিফট’ হয়েছে করোনার বিরুদ্ধে,” নিউজনেক্সটবিডিকে বলেন তিনি। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো কোনোমতেই টিকতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন এই বিশ্লেষক।