
ডেস্কঃ ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন উন্মাদ, স্বার্থান্বেষী পাকিস্তানি সমরতন্ত্রের তর্জনী উপেক্ষা করে দৈনিক সংবাদ এর নির্ভীক সংবাদ পরিবেশনে রীতিমত ভীত হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় পত্রিকাটির কার্যালয়। নিউজ টেবিলে শুয়ে থাকা একজন সাংবাদিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন সে ঘটনায়। অপূরণীয় ক্ষতির কারনে সাময়িকভাবে পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ থাকলেও থেমে যায়নি দৈনিক সংবাদের যাত্রা, কারন এর পরিচালনা ও সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সাংবাদিক, সম্পাদক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ জহুর হোসেন চৌধুরী। ১৯২২ সালের আজকের দিন, ২৭ জুন তারিখে জন্মগ্রহণ করা এই প্রখ্যাত গুণীজন তার জীবনের প্রায় সবটুকু সময় দিয়েছেন প্রিন্ট মিডিয়া তথা সংবাদ পত্রের জগতে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক সংবাদের অন্যতম একজন পরিচালক।
তার সাংবাদিক জীবনের সূচনা হয় প্রয়াত হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকায়। ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু হওয়া কর্মজীবনে তিনি শিক্ষানবিশ, সম্পাদক ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন যথাক্রমে ‘দ্য স্টেটসম্যান’, ‘কমরেড’ ও ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া’ পত্রিকায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। সরকারি কয়েকটি পেশা বদল শেষে তিনি আবার সাংবাদিকতায় প্রত্যাবর্তন। সাংবাদিক জীবনের দ্বিতীয় অংশে ‘উপাত্ত’ ও ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকায় কিছুকাল কাজ করার পর ১৯৫১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি এ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ‘সংবাদ’ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ‘কাউন্টার পয়েন্ট’ নামে একটি ইংরেজি সাময়িকী সম্পাদনা করেন।
১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর জহুর হোসেন চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। দৈনিক সংবাদের পাতায় তিনি ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে একটি কলাম লিখতেন যা পাঠকপ্রিয়তার উৎকর্ষে পৌঁছেছিল। এসব নিবন্ধেরই বাছাই করা সঙ্কলন ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কৃতিত্বপূর্ণ জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮১ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। এছাড়া দৈনিক সংবাদ তার স্মরণে প্রবর্তন করেছে ‘জহুর হোসেন স্মৃতিপদক’।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকেএস/টিএস