
ঢাকা: কোরআনের কিছু সুরার খণ্ডিত অংশ বিকৃত করে জিহাদের নামে তরুণদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘কোরআনের কিছু সুরার খণ্ডিত অংশ বিকৃত করে জিহাদের নামে বেহেস্তে যেতে পারবে বলে তরুণদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আর বেহেস্তের আশায় তরুণরা জীবন বিসর্জন দিচ্ছে।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক’মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার নতুন নতুন তথ্য আসার প্রেক্ষাপটে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, উপাচার্য ছাড়াও ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের নিয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা বেশি ছিল। কিন্তু এখন ভালো ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছেলেরাও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তারা মানবতার বিরুদ্ধে হামলা করে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতিকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে।’
এ বিষয়ে পরিবার ও শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘সন্তানরা যেন বিপথে না যায় তা দেখার দায়িত্ব পরিবারের ও শিক্ষকদের। তাই সন্তানরা যেন এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়তে পারে অভিভাবকরাও সেদিকে খেয়াল রাখবেন। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন তাদেরও এগুলো নজরদারি করতে হবে।’
আইজিপি বলেন, ‘আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে এ সঙ্কট মোকাবিলায় এগিয়ে আসি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনাদের পাশে থেকে কাজ করবে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স।’
তিনি বলেন, ‘কে সন্ত্রাস করল, কে কোন দলের, কে কোন মতের সেটা বড় কথা না। সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাই, আপনাদের সহযোগিতা দরকার।’
সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘জঙ্গিবাদ আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি সামাজিক ও বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা সারাদিন চেষ্টা করছি এসব হায়েনাদের মোকাবেলা করার জন্য। গুলশানের ঘটনায় আমার সামনে দু’জন সহকর্মী মারা গেছেন। ২৬ জন স্প্রিন্টারের আঘাতে কাতরাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আত্মসমালোচনা দরকার। সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জঙ্গিবাদকে ‘না’ বলতে হবে। যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে চায় তাদের মোকাবেলা করতে হবে।’
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘এক সময় শোনা যেতো মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জঙ্গি তৈরি হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করা যাবে না। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দেশজ সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে।’
সভার শুরুতে পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (ইউজিসি) অধ্যাপক আবদুল মান্নান, র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ছাড়াও শিক্ষাবিদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এমএস/ওয়াইএ