
প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: সারা দেশে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার এগারো বছর পূর্ণ হচ্ছে বুধবার। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার পাঁচশ স্পটে একযোগে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
মূলত ওই হামলার মধ্য দিয়েই জেএমবির আত্মপ্রকাশ ঘটে। নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে এদিন তারা সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় দু’জন নিহত এবং স্প্রিন্টারের আঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জেএমবির ৬৬০ সদস্যকে আসামি করে সারা দেশে ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। এগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে ১০৩টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। এসব মামলায় জেএমবির ১৫ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড, ১১৮ জনের যাবজ্জীবন, ১১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং খালাস পায় ১১৮ জন। বাকি ৫৮টি মামলার বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যার মধ্যে স্বাক্ষীর অভাবে থমকে আছে অনেক মামলা।
সিরিজ বোমা হামলা প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একে এম শহীদুল হক বলেন, ‘ওই সময় রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জঙ্গিরা সংগঠিত হয়েছিল, যা বিভিন্ন সময় তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু জঙ্গিরা যাতে কোনভাবেই সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য পুলিশ ও সরকারের আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন সতর্ক রয়েছে। বোমা হামলাকারীদের অনেককে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের আগের মতো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কোন সুযোগ নেই।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, থিংক-ট্যাক আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার এবং ঝালকাঠি জেলায় দু’জন বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ে। তবে এখনো তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। যার প্রমাণ মেলে সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা থেকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘জেএমবি দেশব্যাপী বোমা হামলা চালিয়ে তাদের শক্তির জানান দিয়েছিলো। পরে অনেকের বিচার হয়েছে, জেলে রয়েছে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতারা। জেএমবি আগের মতো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নয় তবে জেএমবি ভেঙ্গে নব্য জেএমবি গঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নব্য জেএমবির সদস্যরাই সাম্প্রতিক হামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত। সারাদেশে নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটনের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে তারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। তারা তাদের আদর্শ ও কর্মকান্ডকে গতিশীল ও উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করে আসছে। বর্তমানে দেশীয় ইসলামী উগ্রপন্থি সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করাই তাদের উদ্দেশ্য।’
অার র্যাবের মতে, আলোচনায় আসতেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ‘আইএস’এর নাম ভাঙাচ্ছে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো। এরা মূলত জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) ও এবিটি (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। বর্তমানে এরা যৌথভাবে ‘দাওলাতুল ইসলাম’ নামে সক্রিয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে জানান, দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশের সদস্যরা এখন অবধি দেশে ১১টি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও মাদারীপুরে শিক্ষকের জঙ্গি হামলাও রয়েছে।
র্যাব জানায়, জঙ্গিরা প্রথমত দাওয়াতের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করে। সাধারণত দু’ভাবে তারা এই দাওয়াত দেয়; সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দাওয়াত দেয়ার আগে তারা কাঙ্খিত ব্যক্তির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে। প্রাথমিক যাচাই শেষে ওই ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে জঙ্গিরা। এরপর তাকে সদস্য বানিয়ে জিহাদ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করে।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ