
ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিকম কোম্পানির ওপর বিভিন্ন রকম অতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ ঝেড়েছেন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)-এর সাধারণ সম্পাদক টি আ এম নুরুল কবির। তিনি বলেন, ‘বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতে এমন সব কর চাপানো হয়েছে যা জনগণের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ এই খাত সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন খাত হিসেবে কাজ করে।
শনিবার রাজধানীর এক হোটেলে জাতীয় বাজেট ও টেলিযোগাযোগ খাতে করনীতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব টেলিকম খাতের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এই সেক্টরের অগ্রগতিতে বাধা পড়বে। বিদেশিরা এ খাতে বিনিয়োগ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে নুরুল কবীর বলেন, সরকার একসময় কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক আরোপ কমিয়ে দেয়। এতে সরাসরি সরকারের কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় দেশেরই লাভ হয়েছে। মানুষের সক্ষমতা যত বাড়বে, তত ব্যবহার বাড়বে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সামগ্রিক কর ব্যবস্থার সংশোধন প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, বাজেটের আগে এনবিআরকে ১২-১৩টি প্রস্তাব দেওয়া হয় অ্যামটবের পক্ষ থেকে। অথচ একটিরও প্রতিফলন বাজেটে দেখা যায়নি।
নুরুল কবির বলেন, টেলিকম খাতে ২০১৫ সালের মোট আয় বৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ। সরকার ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জ মিলিয়ে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছে। আগের বছর থেকে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে ২ শতাংশ। ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বার্থে আমরা এই অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সারচার্জ প্রত্যাহারের দাবি করছি। ভ্যাট ট্রাইব্যুনালে জামানতের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করারও সমালোচনা করেন অ্যামটব সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, এই ধরনের বিধান দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে। বিরোধপূর্ণ অর্থের ৫০ শতাংশ অগ্রিম আদায় ‘প্রাথমিকভাবে নির্দোষ ধরে নেওয়ার নীতি’ এবং করদাতার সংরক্ষিত অধিকারের পরিপন্থি। এ খাতের করপোরেট কর হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর বিরোধ নিয়ে আপিলের ক্ষেত্রে মোট কর দায়ের আগাম জমা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো ১০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
শুল্কারোপের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ‘স্বেচ্ছাচারী’ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন অ্যামটব নেতারা। বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, “এনবিআর দীর্ঘমেয়াদে দেখে স্বল্প মেয়াদে করারোপ করে। যখন টাকার কথা মনে হয়, তখনই তারা একটা শুল্ক সিদ্ধান্ত নেয়। আগের বছরের সম্পূরক শুল্কের ওপর জানুয়ারিতে আবার ১ শতাংশ কর বাড়িয়েছিল। এভাবে সর্বোচ্চ শুল্কদাতা প্রতিষ্ঠানে শুল্ক বাড়ানো হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কতদিন থাকবে, সেটার দিন গুনতে হবে। এ কারণে আমরা বলছি, সবাই মিলে বসে দীর্ঘমেয়াদে একটি শুল্ক পরিকল্পনা করি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের স্টেকহোল্ডার রিলেশনস পরিচালক রায়হান রশিদ, এয়ারটেল বাংলাদেশের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা আশরাফুল এইচ চৌধুরী, রবি’র সহসভাপতি একরাম কবির, সিটিসেলের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তানিয়া মাহবুব, টেলিটকের উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান খান।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/আরকে/এসআই