
ঢাকা: নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজধানীর হাজারীবাগে থাকা ১৫৪টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ মোহম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম শাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে শিল্পসচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রইস উদ্দিন। আইনজীবী মনজিল মোরসেদে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এছাড়া আদালতের এই আদেশ মনিটরিং করে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশে প্রতিদিন কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা নির্ধারণ করে আগামী ১৭ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শিল্প সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে পরিবেশের কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তার হিসার পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরে সচিবকে দিতে বলা হয়েছে।
রিটকারী সংগঠনের আইনজীবী মঞ্জিল মোরশেদ জানান, এটি একটি যুগান্তকারী আদেশ। এর ফলে যেসব ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠান যতোদিন না সরাবে ততোদিন তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
দীর্ঘদিন ধরে ওই আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় অন্য এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দেন।
সরকার পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।
কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও স্থানান্তর না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করেন পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে মনজিল মোরসেদ।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে গত বছরের ২১ এপ্রিল আদালতের তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন শিল্প সচিব।
এরপরও ওই দশ প্রতিষ্ঠান হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পদক্ষেপ না নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগে আরো একটি আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ।
এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১১ আগস্ট হাইকোর্ট দশ কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এ রুলের পর দশ মালিককে তলব করে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২১ মার্চ আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ। ২৩ মার্চ এ আবেদনের শুনানি শেষে ব্যাখ্যা দিতে আদালত দশ মালিককে ১০ এপ্রিল তলব করেন।
হাজিরা দিতে আসার পর ব্যাখ্যা না দেয়ায় তিন মালিককে তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করার আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক তাদের কোর্ট পুলিশের কাছে রাখেন।
বিকালে তাদের আইনজীবী ফিদা এম কামাল সময়ের আবেদন ও তাদের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সোমবার দুপুর একটার মধ্যে ট্যানারি সরানোর বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবেন- এ শর্তে আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পরের দিন তাদের আইনজীবী ফিদা এম কামালের মাধ্যমে হলফনামা জমা দেন তিন ট্যানারি মালিক। হলফনামায় তারা তাদের হাজারীবাগের কারখানা বন্ধ রাখাসহ আগামীতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের আশ্বাস দেন। পরে তাদের আদালত অবমাননার হাত থেকে রেহাই দেয়া হয়।
এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগে এখনো যেসব ট্যানারি ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের তালিকা চেয়েছিলো হাইকোর্ট।
তিন সপ্তাহের মধ্যে শিল্প সচিবকে এই তালিকা বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করতে হবে।
আদালতের এ আদেশ অনুসারে শিল্প সচিবের পক্ষে আইনজীবী রইস উদ্দিন ১৫৫টি ট্যানারির তালিকা হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে মাত্র একটি ট্যানারি স্থানান্তর করে।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফএইচ/এমএস/এসআই/জাই