
ডেস্ক: ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৬টি শক্তিশালী দেশের করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের ক্ষমতাশীল দেশের নেতারা।
গত মঙ্গলবার ট্রাম্প ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তিটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তিনি তেহরানের বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকি দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে চুক্তিটি স্বাক্ষরকারী অপর ৫টি দেশের সঙ্গে আলোচনা করবে ইরান।
এদিকে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহার করা নিয়ে ট্রাম্পের ভাষণের পর বিশ্ব নেতারা এই ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং চীন ইরানের সঙ্গে এই পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন টুইটারে জানান, ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সিদ্ধান্তে ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য দুঃখপ্রকাশ করছে।
২০২৫ সাল পর্যন্ত পারমাণবিক কার্যকলাপ প্রতিরোধে এবং মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে স্থিতিশীলতা কায়েম করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ ইভেস লে ড্রিয়ান বেতারে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, ইরানের পারমাণবিক চুক্তিটি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এটির ভবিষ্যত নির্ধারণে ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামি সপ্তাহে ইরানের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাত করবেন।
জার্মান সরকারও চুক্তিটি বহাল রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস জানান, এই চুক্তি বিশ্বকে নিরাপদ রেখেছে। এটি থেকে সরে দাঁড়ানোর বৈধ কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না জার্মানি।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তিতে আর না থাকায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটারে দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি জানান, যুক্তরাজ্য ইরানের পারমাণবিক চুক্তি রক্ষায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনি পারমাণবিক এই চুক্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তির বিধি নিষেধ ইরানের মেনে চলার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা যে ১০টি প্রতিবেদন দিয়েছে তার প্রতি আমরা আস্থাশীল।
এদিকে ইউরোপের বাইরে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী এশিয়ার একমাত্র দেশ চীন চুক্তিটি রক্ষার ব্যাপারে ফের অঙ্গীকার করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বিশেষ দূত গং শিয়াওশেং এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কোন চুক্তি না থাকার চেয়ে চুক্তি থাকা তুলনামূলকভাবে ভালো। এছাড়া সংঘর্ষে যাওয়ার চেয়ে আলোচনা করাও অনেক উত্তম।
রাশিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ালেও চুক্তিটি কার্যকর রাখার চেষ্টা করে যাবে তারা।
ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছে তুরস্ক। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস আশা করেন, চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশগুলি এটি রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তিটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ভুলপথে পরিচালিত সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ওবামার প্রশাসন ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিল।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল এবং সৌদি আরব ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে যারপরনাই আনন্দ প্রকাশ করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগতও জানিয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা
গ্রন্থনা: ফারহানা করিম