
ঢাকা: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটের উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বরিশাল বুলসকে উড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। তারকা সমৃদ্ধ দলটি সমান উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান সংগ্রহ করেছিল মুশফিকুর রহীমের বরিশাল বুলস।
জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ঝড়োগতির হাফসেঞ্চুরির উপর ভর করে ঢাকার সামনে ১৪৯ চ্যালেঞ্জিং এ টার্গেট ছুঁড়ে দেয় বরিশাল বুলস। কিন্তু মাঠে নেমে সেই লক্ষ্যটাকে একেবারেই মামুলি বানিয়ে ফেলেন ঢাকার দুই ওপেনার মেহেদী মারুফ ও শ্রীলঙ্কান কুমারা সাঙ্গাকারা।
তাদের আক্রমনাতক ব্যাটিংয়ে ২৪ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পায় সাকিববাহিনী। মেহেদী মারুফ ৭৫ রানে ছিলেন অপরাজিত। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটাই তার সর্বোচ্চ স্কোর।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হওয়া এ ম্যাচে টস জিতে সাকিব আল হাসান ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রন জানান মুশফিকুর রহীমকে। শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বরিশালের। ৪৪ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় দলটি। শামসুর রহমান শুভ (৬), মুনাবিরা (১২) ও মালান (১৬) রান করে সাজঘরে ফিরে যান।
টপ অর্ডারের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ম্যাচে নিজেদের হারানো পথটা খুঁজতে শুরু করেন মুশফিক। তাকে সঙ্গ দিতে মাঠে আসেন শাহরিয়ার নাফিস। এ জুঁটি প্রতিপক্ষের বোলারদের শুরুতে কিছুটা সমীহ করেই ব্যাট হাঁকাতে থাকেন। সুযোগ পেলে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেন। অনেকটা সময় তারা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট চালান।
তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেনো চওড়া হতে থাকে তাদের ব্যাট। ইনিংসের ১৩তম ওভার থেকেই মূলত সাকিব-শহিদ-অ্যান্ড্রু রাসেলদের শাষন করা শুরু করেন মুশফিক-নাফিস। তাদের ব্যাটিং তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে ঢাকার বোলিং লাইন। আর এ সুযোগে মাত্র ৩১ বলেই নিজের অর্ধশত পূরণ করে নেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস।
এরপর তার ব্যাট আরো প্রসারীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পেসার শহিদের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে সরাসরি বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। এই আউটে বোলারের যতোটা না কৃতিত্ব তারচেয়ে বেশী ভুল ছিল নাফিসের। ষ্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের নিচের অংশে বল লেগে অফ ষ্ট্যাম্প উড়ে যায় তার। সাজঘরে ফেরার আগে ৪১ বলের খরচায় সাত বাউন্ডারি ও দুই ওভার বাউন্ডারিতে ৫৫ রানের ইনিংস সাজান নাফিস। মুশফিকের সাথে তিনি দলকে উপহার দেন ৮২ রানের পার্টনারশীপ।
এরপর আবারো দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে ঢাকা ডায়নামাইটস। দলীয় ১২৬ রানে নাফিসের বিদায়ের মাত্র ১৩ রানের মধ্যে থিসারা পেরেরা ও রায়ন এমরিটের উইকেট হারায় বরিশাল বুলস। তবে মুশফিকের ব্যাট ছিল অবিচল। শেষ পর্যন্ত তিনি লড়াই করে গেছেন। অধিনায়কোচিত ইনিংস উপহার দিয়েছেন দলকে। ইনিংসের শেষ বলে ডুয়াইন ব্রাভোকে সিঙ্গেল নিয়ে প্রথম ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরির স্বাদ পান বরিশালের অধিনায়ক। ৩৬ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ঢাকার হয়ে মোহাম্মদ শহিদ তিন উইকেট তুলে নেন।
জয়ের জন্য ১৪৯ রানের টার্গেটে মাঠে নেমে মেহেদী মারুফ ও কুমারা সাঙ্গাকারা দূর্দান্ত শুরু করেন। তারা বরিশালের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলে রানের চাকা ‘সুপারসনিক’ গতিতে এগিয়ে নিতে থাকেন। প্রথম পাওয়ার প্লে’তেই (৬ ওভারে) কোন উইকেট না হারিয়ে ৭৩ রান সংগ্রহ করেন। কুমারা সাঙ্গাকারার ব্যাট কিছুটা ধীরস্থির হলেও মেহেদীর ব্যাট ছিল নির্দয়।
ব্যক্তিগত ৩০ রানে কুমারা সাঙ্গাকারা তাইজুলের ঘূর্ণী বলের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিররেও মেহেদীর ব্যাট ছিল অবিচল। দলীয় রান তখন ৮৮। মাঠে নামা সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে আরো ৪৮ রানের পার্টনারশীপ উপহার দেন মেহেদী। নামের পাশে ২০ রান জমা করার পর সাকিব প্যাভিলিয়নের পথ ধরে মনির হোসেনের বলে সরাসরি বোল্ড আউট হয়ে। জয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এরপর মাঠে এসে মোসাদ্দেক হোসেন বাকী কাটা সেরে ফেলেন মেহেদী মারুফের সঙ্গে ব্যাট করে। ঢাকা ডায়নামাইটস ২৪ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে তরী ভেড়ায়। আট উইকেট জয় পায় সাকিবের দল। শেষ পর্যন্ত মেহেদী অপরাজিত ছিলেন ৭৫ রানে। ৪৫ বলে পাঁচ ছক্কা ও সমান চার দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান এ ওপেনার।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ