
মিশুক মনির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ২০১৭ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের নামিদামি মানুষরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অরগানাইজেশনের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস গ্যারি, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, ড. মাহাথির মোহাম্মদ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক ইউয়ান টি লি, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল হুসসাম ও প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রণজিত্ গুহ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকাভো।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ আমলে তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। তখন বাংলার তৎকালীন গভর্নর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড লিটন (রোনাল্ডশে সিআইই) সমাবর্তন ভাষণ দেন। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই (সর্বমোট ২৪ বার) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে শেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর।
পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ। ২৪ মার্চের সেই সমাবর্তনে কার্জন হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে জঘন্যতম ভাষণ দিয়েছিলেন তার প্রতিবাদে সমাবর্তন স্থলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ছাত্ররা দাঁড়িয়ে নো নো বলে তীব্র প্রতিবাদ করেন, তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
১৯৫২ সালের সমাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি কিন্তু মহান ২১ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনায় আর হতে পারেনি। সে বছর ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট ১৫ বার সমাবর্তন হয়।
১৯৬৪ সালের সমাবর্তন ছিল এক পন্ডময় সমাবর্তন, তৎকালীন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনি ও চ্যান্সেলর আবদুল মোনায়েম খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেবারই প্রথম কোনো সমাবর্তনে চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। কিন্তু মোনায়েম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে ছাত্র-ছাত্রীরা অস্বীকার করলে এই সমাবর্তন পন্ড হয়ে যায়। পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ১৯৭০ সালে ৮ মার্চ; সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন।
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো (৪০তম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সমাবর্তন উদ্বোধন করার কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই ভোররাতে ঘটে যায় সেই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি ফলে তখন সমাবর্তন স্থগিত করা হয়।
এরপর স্বাধীন বংলাদেশে প্রথম সমাবর্তন (৪০তম) অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর যা ছিল দীর্ঘ ২৯ বছর বিরতির পর। এরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১২ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সব থেকে বৃহত্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের মার্চ মাসে (৪৭তম), প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এটিও সমাবর্তন ইতিহাসের এক অনবদ্য সংযোজন, সমাবর্তনের প্রধান বক্তা ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী।
সম্পাদনা: জাহিদ